শেষ সময়ে এসে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনের ফাইল ছুটছে রকেট গতিতে! বিআরটিএর চিঠি পাওয়ার এক দিনের মধ্যেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। বিআরটিএ এখন বুয়েটের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ চাইবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বিআরটিএকে যে চিঠি দিয়েছে, তাতে অবশ্য মেয়াদ বাড়ানোর ইঙ্গিত স্পষ্ট। ফলে বুয়েটের মতামত হবে একধরনের আনুষ্ঠানিকতা। কারণ, বিআরটিএকে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, অটোরিকশার ইকোনমিক লাইফ (অর্থনৈতিক মেয়াদ) ১৫ বছরের অতিরিক্ত কত বছর বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে বুয়েটের মতামত গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। একই চিঠিতে বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে একটি কমিটি গঠন করে মেয়াদ বাড়ানোর উপযোগী অটোরিকশার তালিকা করতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ছেই।
গত ১৬ অক্টোবর অটোরিকশা মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিআরটিএ। সমিতি অটোরিকশার মেয়াদ আরও ছয় বছর বাড়ানোর দাবি জানায়। এ বিষয়ে আগের মতো বুয়েটের মতামত নেওয়ার অনুমতি চেয়ে ২৩ অক্টোবর বিআরটিএ চিঠি পাঠায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে। ৩০ অক্টোবর সে চিঠিটি পায় বলে জানান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেক। ৩১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব দুলাল মিঞা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিআরটিএকে তাদের আবেদন অনুযায়ী বুয়েটের মতামত নিতে বলা হয়।
অটোরিকশার ফাইলের এই দুরন্ত গতির হেতু আছে বলে মনে করছে ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানোর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এই সংগঠনের সদস্যসচিব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ফাইলের এই গতির কারণ টাকা। গত এক মাসে মালিক সমিতি অটোরিকশার মালিকদের কাছ থেকে অন্তত পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছে। মেয়াদ বৃদ্ধির কাজে খরচের জন্যই এই টাকা তোলা হয়েছে।’
‘অটোরিকশার মেয়াদ বাড়ানোর তোড়জোড়, আড়াই কোটি টাকা তুলছে মালিক সমিতি’ শিরোনামে ২ নভেম্বর প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। তাতে ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক বরকত উল্লাহ বলেছিলেন, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা ব্যবসায়ী মালিক সমিতি প্রতিষ্ঠার পর মালিকদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা নেওয়া হয়নি। এখন এর একটা অংশ নেওয়া হচ্ছে। বুয়েটে অটোরিকশা পরীক্ষার ফিসহ অন্যান্য কাজে এ টাকা খরচ করা হবে। নতুন অটোরিকশা আনার ক্ষেত্রে সময়স্বল্পতার কথা বলেছিলেন এই নেতা।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অটোরিকশার মেয়াদ বাড়াতে মালিক সমিতি প্রায় এক বছর আগে গত বছরের ২২ নভেম্বর আবেদন করেছিল। এত দিন তা মন্ত্রণালয়ে পড়ে ছিল। আগামী মাসে অটোরিকশার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে এসে এখন কোনো বিকল্প না ভেবে সরাসরি মেয়াদ বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অটোরিকশা চালক সমিতির এক নেতা বলেন, প্রশাসনের এই কালক্ষেপণ এবং মালিক সমিতির হঠাৎ তৎপরতা এবং সে মতো প্রশাসনের আকস্মিক সক্রিয়তা একসূত্রে গাঁথা। মালিক সমিতি এখন বলছে, মন্ত্রণালয় এক বছর ধরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, এখন দেড়-দুই মাসে বিপুল পরিমাণ অটোরিকশা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়, তাই মেয়াদ বাড়াতে হবে। কিন্তু শ্রমিকেরা লক্কড়ঝক্কড় অটোরিকশা চান না। তাঁরা নতুন অটোরিকশা চান।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে চলাচল করা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার অটোরিকশার মধ্যে ১৩ হাজার ৩০টির মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে। বাকিগুলোর মেয়াদ শেষ হবে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এর আগে তিন দফায় এসব অটোরিকশার মেয়াদ ছয় বছর বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হয়। এখন আরও ছয় বছর বাড়ানোর তৎপরতা চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি হাতে পাইনি। পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্মার্ট নিউজ টোয়েন্টিফোর