আরও কম দামে মোকামে চাল বিক্রি করছেন আমদানিকারকরা। আগের দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার কেজিতে দু-এক টাকা কমে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা ও মাঝারি চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করেছেন তারা। গত বুধবার এসব চালের দাম কেজিতে চার টাকা কমেছে। চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে তল্লাশি অব্যাহত থাকায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছেন। এতে চালের দাম আরও কমে আসবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
দু’দিন ধরে মিলগেট, আমদানি ও পাইকারি—সব পর্যায়ে চালের দাম কমলেও খুচরায় এখনও কমেনি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত খুচরা বাজারে মোটা চাল প্রতিকেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া মাঝারি বিআর-২৮ চাল ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা, মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের শুল্ক কম ও বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে চাল আমদানি বেড়েছে। গত ১৬ আগস্ট চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে বেসরকারি পর্যায়ে দুই লাখ ৬০ হাজার টন চাল আমদানি হয়। চলতি মাসে গত ২০ দিনে তিন লাখ ৩৫ হাজার টনের বেশি চাল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। দিন দিন আমদানি আরও বাড়ছে। এতে চালের দাম আরও কমবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশের আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে চাল রফতানি বন্ধ হচ্ছে—এমন ভুল তথ্যে বাজার অস্থির হয়ে যায়। মিল মালিকরা সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন। এর পর থেকেই চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে যায়। গত মঙ্গলবার তিন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দর কমানোর আশ্বাস দেন ব্যবসায়ীরা। এর পর এক সপ্তাহ ধরে চলা বাড়তি দর গত মঙ্গল ও বুধবার থেকে কমতে শুরু করে। বৃহস্পতিবারও কেজিতে আরও দু-এক টাকা কমেছে।
বৃহস্পতিবার আমদানিকারকরা মোটা চাল মোকামে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন। এই চাল গত বুধবার ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়। এর আগে এক সপ্তাহ ধরে এই মোটা চাল ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা ও মাঝারি রত্না চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা পর্যন্ত দাম ছিল। দাম বৃদ্ধির আগে মোটা চাল ছিল ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা এবং মাঝারি চাল ছিল ৪০ থেকে ৪১ টাকা।
হিলি স্থলবন্দরকেন্দ্রিক আমদানিকারক ললিত কেশরা সমকালকে বলেন, ‘বিভিন্ন স্থানে গুদামে গুদামে তল্লাশি চলছে। এ কারণে পাইকারি ব্যবসায়ীরা চাল কিনতে অর্ডার কমিয়ে দিয়েছেন। আগে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টন চাল বিক্রি হয়েছে। এখন দু-এক গাড়ি বিক্রি করা যাচ্ছে না।’
এদিকে, রফতানিকারকরা পূজার জন্য ভারত থেকে প্রায় এক সপ্তাহ চাল পাঠাবেন না। এই চাল আগেভাগেই পাঠিয়ে রাখছেন তারা। এ কারণে আমদানি বেশি হয়েছে।
এই আমদানিকারক বলেন, ‘দেশে চাল আমদানিতে শুল্ক কমায় আমদানি বেড়ে যায়। এ কারণে ভারতের রফতানিকারকরা দাম বাড়িয়ে দেন। প্রতি টন চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ ডলার বেড়ে ৫২০ থেকে ৫৫০ ডলারে আমদানি করতে হয়। তবে দু’দিন ধরে ভারত চালের দর কমিয়েছে। এখন প্রতি টন ৫০০ থেকে ৫২০ ডলারে আমদানি হচ্ছে। গত জুলাই ও আগস্টে প্রতি টন চাল ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলারে আমদানি হয়েছে।’
হিলি স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, ‘চালের দাম বৃদ্ধির পর আমদানি আরও বেড়েছে। এ কারণে ভারত দাম বাড়িয়ে ছিল। কিন্তু এখন দেশে দাম কমে যাওয়ায় ভারত দাম কমিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি টন ৫০০ থেকে ৫২০ ডলারে আমদানি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও আমদানি বেড়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ক্রমান্বয়ে আমদানি বাড়ছে।’
রাজধানীর চালের পাইকারি বড় আড়ত বাবুবাজারের তাসলিমা রাইস এজেন্সির ব্যবসায়ী আবদুর রহিম সমকালকে বলেন, ‘বাজারে গত দু’দিন দাম কম থাকলেও খরিদদার নেই। দাম আরও কমবে, এ কারণে খুচরা বিক্রেতারা তেমন চাল কিনছেন না। তা ছাড়া দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সময়ে আরও বাড়বে পরিকল্পনা থেকে বেশি চাল কিনে রেখেছেন অনেকে। তারা এখন মজুদ চাল বিক্রি শেষ করছেন। এ কারণে পাইকারিতে বেচাকেনা কমেছে।’
মিরপুর-১ নম্বরের চাল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আগে বেশি দামে কেনা চাল বিক্রি শেষ না হলে নতুন চাল তুলবেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। কম দামে চাল বিক্রি শুরু হলে তাদের এখন লোকসান দিতে হবে। এ কারণেই বাজারে এখনও কম দামে বিক্রি শুরু হয়নি। তিনিও আগের দামেই বিক্রি করছেন।
তবে আগামী সপ্তাহ থেকে খুচরায় কম দামে বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।