বরিশাল : আর মাত্র চারদিন পরেই শেষ হবে ইলিশ মৌসুম। দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী ও মোকামগুলোতে গত কয়েক মাসে ইলিশ নিয়ে যে মহাকর্মযজ্ঞ চলছিলো তা আর থাকছে না ৩০ সেপ্টেম্বরের পর। মা ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিতে ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদের ওপর টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১ অক্টোবর। এরপর ১ নভেম্বর থেকে টানা আট মাস জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
মৌসুমের শেষপর্যায়ে এসে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারী মোকাম ও ছোট-বড় হাটবাজারে এখন শুধু ইলিশ আর ইলিশ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মুখরিত ইলিশ মোকামগুলো। এদিকে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মৎস্য বিভাগ।
মঙ্গলবার নগরীর পোর্ট রোড ইলিশ মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, যেমন প্রচুর ইলিশ, তেমন অসংখ্য ক্রেতার সমাগম। শেষ হতে যাওয়া চার মাসের ইলিশ মৌসুম কেমন ছিল জানতে চাইলে ক্রেতারা জানান, মোকামে পর্যাপ্ত ইলিশের আমদানী হলেও পুরো মৌসুমে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম কমেনি। বড় সাইজের ইলিশের আমদানী ছিল খুবই কম। এ প্রসঙ্গে ইলিশ ব্যবসায়ী ও জেলেরা বলেন, গভীর সাগরে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়েছে। ফলে বিগত বছরগুলোর মতো এবছর ইলিশের দরপতন ঘটেনি।
তবে অভিযোগ রয়েছে, মোকামের আড়তদারদের সিন্ডিকেটের কারণেই এবছর ইলিশের দাম প্রত্যাশা অনুযায়ী কমেনি। পোর্ট রোড ইলিশ মোকামে ইলিশে সয়লাব। ইলিশ কেনার জন্য মোকামে হাজার হাজার ক্রেতার আগমন ঘটেছে।
ইলিশ আড়তদার মালিক সমিতির সভাপতি অজিত দাস মনু জানান, মঙ্গলবার মোকামে কমপক্ষে দুই হাজার মন ইলিশ পাইকারী বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগেও গড়ে এক হাজার মন ইলিশ আমদানী হতো। বরিশাল মোকামের পাইকারী বাজারে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকা করে। ছয় থেকে নয় শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ছিল ৬৫০ টাকা। খুচরা বাজারে ইলিশের কেজি আরও এক থেকে দেড়শ’ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম বরগুনার পাথরঘাটায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেষ মুহুর্তে সেখানেও প্রচুর ইলিশের আমদানী হয়েছে। পাথরঘাটা পাইকারী আড়তদার সমিতির ক্যাশিয়ার জিয়াউল হক মিন্টু জানান, মঙ্গলবার পর্যন্ত ওই মোকামে সাড়ে নয় হাজার মেট্টিক টন ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
ওই মোকামে ছয় থেকে নয়শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ছয়শ’ টাকা এবং এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে ৮৫০ টাকায়। একই ধরনের দাম ছিল দক্ষিণের অন্যতম ইলিশ মোকাম পটুয়াখালীর আলিপুর-মহীপুর মোকামে।
পাথরঘাটার ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাষ্টার জানান, নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে শেষবারের মতো ইলিশ নিধনের জন্য সেখানকার সবগুলো ট্রলার গভীর সাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৮/২৯ সেপ্টেম্বর সাগর থেকে সবগুলো ট্রলার একসাথে ফিরলে দাম কমার সম্ভবনা রয়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি অজিত দাস মনু বলেন, এক সপ্তাহ ধরে মাছ বেড়েছে। পুজার কারণে মাছের চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে ইলিশও ধরা পড়ছে বেশি। ১ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা আরোপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা তখন মাছ বিক্রি করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, গত কয়েক মাসের তুলনায় এখন প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার আগে আরও বেশি ইলিশ আসবে।
তিনি আরও বলেন, প্রজনন বৃদ্ধিতে ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদের ওপর টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে ১ অক্টোবর। এজন্য ইতোমধ্যে তারা লিফলেট বিতরন, পোস্টারিং, মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারনা চালাচ্ছেন। এছাড়া জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে সংক্রান্ত সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।