মার্কিন বিমান বাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রব গিভেন্স বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধ বাধলে প্রতিদিন দক্ষিণ কোরিয়ার ২০ হাজার মানুষ নিহত হবে। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার দুই কোটি ৮০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে মৃতের সংখ্যা কি দাঁড়াতে পারে সে বিষয়ে কোনো হিসাব দেয়া হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জাই-ইন মার্কিন কৌশলগত বোমারু বিমান বি-১বি ল্যান্সারকে উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত দিয়ে টহল দেয়ার অনুমতি দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ হিসাব দেন সাবেক জেনারেল গিভেন্স।
এদিকে, গত শনিবার রাতে মার্কিন বোমারু বিমান বহর কোরিয়া উপদ্বীপের আকাশে টহল দিয়েছে। এ শতাব্দীর শুরু থেকে ওই এলাকার আকাশে যে টহল দেয় শনিবার তার চেয়ে অনেক উত্তর ঢুকে পড়েছিল মার্কিন বিমান বহর।
মার্কিন যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করবে উ. কোরিয়া
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দেশের বিরুদ্ধে ঘোষণা করায় মার্কিন বোমারু বিমানে গুলি করার অধিকার রয়েছে তাদের।
নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রি ইয়ং হো এই হুমকি দিয়েছেন।
উত্তর কোরিয়ার মন্ত্রী বলেন, এমনকি মার্কিন যুদ্ধ বিমান যদি তার দেশের আকাশসীমার বাইরেও থাকে তাহলেও সেগুলোকে হুমকি হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
“সারা বিশ্ব এটাই দেখবে যে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।”
গত কয়েক দিন ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং কিম জং আনের সরকারের মধ্যে অব্যাহত বাকযুদ্ধের মাঝে রোববার কোরীয় উপদ্বীপের কাছে অত্যাধুনিক মার্কিন যুদ্ধ বিমানের টহল দেওয়ার ছবি পেন্টাগনের সূত্রে সংবাদমাধ্যমে ছাপা হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে সোমবার এই হুমকি দেয়া হলো।
তবে দুই দেশের মধ্যে এখনই যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা নাকচ করছেন অধিকাংশ পর্যবেক্ষক।
গোপনে নতুন পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে উ. কোরিয়া!
উত্তর কোরিয়া গোপনে পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ তৈরি করছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে এটি নির্মাণের কাজ শেষ হবে বলে দেশটি প্রত্যাশা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি তথ্যাভিজ্ঞ মহলের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে জাপানি দৈনিক সেকাই নিপ্পো। সূত্রটি উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিচিত বলেও দাবি করেছে দৈনিকটি।
খবরে আরো দাবি করা হয়েছে, উত্তর কোরিয়ার নাম্পো ন্যাভাল শিপইয়ার্ডে এটি নির্মাণে একযোগে সহায়তা করছে চীন ও রাশিয়ার প্রকৌশলীরা।
ডিজেল-বিদ্যুতের চেয়ে পরমাণু ডুবোজাহাজ নির্মাণের কাজ তুলনামূলকভাবে জটিল ও ব্যয় বহুল। অবশ্য পরমাণু ডুবোজাহাজের গতি অনেক বেশি হয়। সাগর তলে প্রায় অনির্দিষ্টকাল ওঁত পেতে বসে থাকতে পারে। জ্বালানির জন্য পানির ওপর ওঠার কোনো প্রয়োজন না থাকায় এমনটি সম্ভব হয়। এ ছাড়া, এ ধরণের ডুবোজাহাজ দিয়ে চালানো যায় বহুমুখী ও বিস্তৃত তৎপরতা।
পরমাণু ডুবোজাহাজ সাধারণভাবে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত হয়ে থাকে। ভূমিভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে তুলনামূলক সংগোপনে ও নিঃশব্দে এ অস্ত্র পানির তল থেকে ছোঁড়া যায়। পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি দিনের পর দিন জোরদার হয়ে উঠছে। এ ছাড়া, দেশটি ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ছয় দফা ডুবোজাহাজ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে।
উত্তর কোরিয়া বহরে ৫০ থেকে ৬০টি ডিজেল-বিদ্যুৎ চালিত ডুবোজাহাজ রয়েছে। পরমাণু ডুবোজাহাজ যোগ হলে তাতে নৌবহরের সক্ষমতা নিঃসন্দেহে এক লাফে বহুদূর এগিয়ে যাবে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে উ. কোরিয়া!
মার্কিন ভূখণ্ডে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে হলে উত্তর কোরিয়া ক্যালিফোর্নিয়াকেই বেছে নেবে বলে দাবি করেছেন সাবেক মার্কিন বিশ্লেষক হ্যাল ক্যাম্পফার। পাশাপাশি সম্ভাব্য পরমাণু হামলার পর গোটা ক্যালিফোর্নিয়ায় কি ভয়াবহ পরিস্থিতি নেমে আসবে হবে তারও রোমহর্ষক বর্ণনা দেন তিনি। বর্তমানে মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বা ডিএইচএসে সন্ত্রাসবাদ ও গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে রয়েছেন।
মার্কিন জনস্বাস্থ্য এবং জরুরি সেবায় জড়িত কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
হ্যাল ক্যাম্পফার বলেন, উত্তর কোরিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর অন্যতম ব্যস্ত ব্যবসা কেন্দ্র এবং বিশ্ব বাণিজ্যের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় একে হামলার জন্য বেছে নেয়া হবে। অবশ্য গোটা ক্যালিফোর্নিয়া ধ্বংস করার মতো শক্তিশালী পরমাণু বোমা পিয়ংইয়ংয়ের নেই বলে মনে করেন তিনি। তারপরও হামলায় বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসবে সেখানে। লাখ লাখ মানুষ মারা যাবেন।
পরমাণু বোমা বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ বা ইএমপি কাছাকাছি সব ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা ধ্বংস করে দেবে। এতে অকেজো হয়ে যাবে মোটর গাড়ি ও ফোন লাইনের মৌলিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও। সাহায্যের জন্য ফোন করাও জটিল হয়ে দাঁড়াবে।
কোনোভাবে গাড়ি স্টার্ট দিতে পারলে নগরী ছেড়ে সহজে বের হওয়া যাবে না। কারণ পলায়নপর মানুষের যানজটের বিশাল সারিতে পড়তে হবে সেখানেও।
এ ছাড়া, খাদ্য ও নিত্যপণ্য নিয়ে দাঙ্গা ও বন্দুকযুদ্ধ শুরু হবে বলেও মনে করেন তিনি।
জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় সমন্বয়ের ভিত্তিতে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার উপযোগী প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।