দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙানোর বন্দনার মধ্য দিয়ে গতকাল শুরু হলো শারদীয় দুর্গোত্সব। গতকাল দেশের মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল পুণ্যার্থীদের উপচে পড়া ভীড়। আজ মহাসপ্তমী। এদিন থেকে ভক্তদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ দল বেঁধে পূজা দেখতে আসছে। উত্সবপ্রিয় বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় মেতে উঠেছে পূজার আনন্দে। মণ্ডপগুলো ঝলমলে আলোকসজ্জায় রঙিন হয়ে উঠেছে। মন্দিরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসা ও ঢাকের বাদ্য। গতকাল ছিল মহাষষ্ঠী।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে সারা দেশে ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিত পূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোত্সবের সূচনা হয়। মাতৃবন্দনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকাল ৯টায়। নানা উপচারে ডালা সাজিয়ে মাতৃমণ্ডপে আসতে থাকেন ভক্তরা। অশুভ শক্তির বিনাশে ‘মঙ্গলময়ী’ দেবীর জাগরণে জগতে সুর শক্তি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা করেন তারা। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, বিল্ববৃক্ষ বা বেলগাছ মহাদেবের ভীষণ প্রিয়। পদ্মযোনী ব্রহ্মাও বিল্ববৃক্ষে দেবীকে প্রথম দর্শন করেন। তাই শাস্ত্র অনুযায়ী দেবীকে বিল্ববৃক্ষ তলে আবাহন করা হয় ।
শারদীয় দুর্গোত্সবের আজ মহাসপ্তমী। আজ শুরু হচ্ছে দেবী-দর্শন, দেবীর পায়ে ভক্তদের অঞ্জলি প্রদান ও প্রসাদ গ্রহণ। মূলত দুর্গোত্সবের মূল পর্ব শুরু হচ্ছে আজ। মহাসপ্তমীতে ষোড়শ উপাচারে অর্থাত্ ষোলটি উপাদানে দেবীর পূজা হবে। সকালে ত্রিনয়নী দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হবে। দেবীকে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, স্নানীয়, পুষ্পমাল্য, চন্দন, ধূপ ও দীপ দিয়ে পূজা করবেন ভক্তরা। সপ্তমী পূজা উপলক্ষে সন্ধ্যায় বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ভক্তিমূলক সঙ্গীত, রামায়ণ পালা, আরতিসহ নানা অনুষ্ঠান হবে। বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে আজ সকাল ৮টা ৫৮ মিনিটে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন ও সপ্তাদি কল্পারম্ভ এবং সপ্তমী বিহিত পূজা প্রশস্ত। আগামীকাল মহাষ্টমী। প্রতিবছরের মত এবারও ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ মিশনে কাল মহাষ্টমীতে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী কুমারী পূজা।
পূজা উদযাপন কমিটির ১১ দাবি: শারদীয় দুর্গাপূজায় তিন দিন সরকারি ছুটির ঘোষণাসহ ১১ দফা দাবি জানিয়েছে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটি। গতকাল ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরে পূজা কমিটির সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়। দাবিগুলোর মধ্যে আছে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সকল ভবনে জাতীয় উত্সবের আঙ্গিকে পাঁচ দিন আলোকসজ্জার ব্যবস্থা, পূজামণ্ডপ ও মণ্ডপগামী সড়কগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহ, পূজার পাঁচদিন সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত, বিজয়া শোভাযাত্রায় সুষ্ঠুভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।