চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার শিবনগর গ্রামের একটি আমগাছে কার্তিক মাসে ধরে আছে আশ্বিনা আম l
আশপাশের সব গাছ যখন আমশূন্য, তখন একটি গাছে ঝুলছিল থোকায় থোকায় আম। আগ্রহ নিয়ে সবাই খোঁজ নিচ্ছিল সেই আমের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের শিবনগর গ্রামের ওই গাছের আম নামানো হয় গত মঙ্গলবার। আশ্বিনা জাতের ওই আমে সম্ভাবনা দেখছেন কৃষিবিদেরাও।
গাছটির মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আট বছর আগে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর থেকে তিনি আমগাছের চারা সংগ্রহ করে লাগান। তিন বছর পরই ওই গাছে আম আসে। কিন্তু জাতটি যে এত নাবি হবে, অর্থাৎ অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আম রাখা যাবে, তা তিনি বুঝতে পারেননি। তাই পরপর দুই বছর আগেই আম ভেঙে নিয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বছরে তিনি লক্ষ করেন, অন্য গাছের আম যখন পেকে গেছে, তখন তাঁর গাছের আম পরিপক্ব হয়নি। ওই বছরই তিনি আমটি রেখে দেন এবং কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহে আম নামান। তারপর থেকে এ বছর পর্যন্ত পরপর তিনবার তিনি কার্তিক মাসের প্রথম সপ্তাহ শেষে আম ভাঙেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, আশ্বিনা জাতের আম গাছে থাকে সাধারণত আগস্ট মাস পর্যন্ত। কিছু কিছু এলাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আম পাওয়া যায়। কিন্তু শিবনগরের ওই গাছের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গাছে ঝুলে আছে এই আম। নাবি জাতের হলেও এই আমের আকার, স্বাদ ও রং অন্য আশ্বিনা আমের মতোই।
কৃষিবিদেরা বলছেন, ‘আমের জগতে এই জাত সংযোজন করা গেলে আমরা প্রায় সারা বছরই আম পেতে পারি। কেননা, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পাকা আম পাওয়া যাবে—এ ধরনের জাত আমাদের হাতে আছে। শুধু শিবনগর গ্রামেই নয়, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলা, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর ও সাপাহার উপজেলায় এ ধরনের আমের একটি করে গাছ রয়েছে। এই সময়ে অন্যান্য গাছে আম না থাকায় চড়া মূল্যে এই আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।’
হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, আশ্বিনা হলেও এই গাছের আম এত নাবী হলো কীভাবে, তা গবেষণার পরই বোঝা যাবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, প্রকৃতিগতভাগে পরাগায়ণের মাধ্যমে এটি হতে পারে। আবার পরিবেশগত কারণেও ওই গাছের আম দেরিতে পাকতে পারে। তিনি বলেন, এই আম দেখতে ও মিষ্টতায় আশ্বিনার মতো হলেও স্বাদ কিছুটা আলাদা। আশ্বিনা আম খেতে টক, কিন্তু এই আম মিষ্টি। আঁটি ও খোসা পাতলা ও মাঝারি আকৃতির। পাল্প শক্ত ধরনের। মিষ্টতা ১৪-১৫ শতাংশ। ভক্ষণের উপযোগী অংশ ৮০ শতাংশ।
আম নামানোর দিনে ওই গাছ পরিদর্শন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গাছটির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ভালো ফলাফল পেলে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’র এই গাছ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।