অং সান সুচি’কে এক হাত নিলেন মার্কিন টিভি নেটওয়ার্ক কমেডি সেন্ট্রালের উপস্থাপক ট্রেভর নোয়াহ। হাস্যরস আর রূঢ় ঠাট্টায় তুলে ধরলেন বাস্তবতা। আর বললেন, শান্তিতে নোবেল জয়ী ক্ষমতাধর একজন ব্যক্তির প্রতি অন্তত নিউ ইয়র্কের সাবওয়েতে প্রচলিত নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত। সেটা হলো- কিছু দেখলে, কিছু বলুন। ইফ ইউ সি সামথিং, সে সামথিং। ‘ডেইলি শো উইথ ট্রেভর নোয়াহ’ অনুষ্ঠানটি কমেডি নির্ভর হলেও, নোবেল দেয়ার পদ্ধতি পাল্টানোর পক্ষে সঙ্গত যুক্তি তুলে ধরেন উপস্থাপক। তিনি বলেন, আমরা কাকে নোবেল দিচ্ছি আর কখন দিচ্ছি সেটা ভাবা উচিত।
গেল সপ্তাহে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানটির ওই পর্বে ট্রেভর বলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার সবথেকে মর্যাদার পুরস্কার। কৌতুক করে তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা ভালো একজন মানুষ হওয়ার জন্য অস্কার পাওয়া। ভালো মানুষের অভিনয় করার জন্য নয়। সম্প্রতি নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে মিয়ানমার। আর দেশটির নেতা অং সান সুচি। অনেকে বলছেন, তাকে নোবেল পুরস্কার ফেরত দিতে বাধ্য করা উচিত।’ এ পর্যায়ে রাখাইন পরিস্থিতি তুলে ধরা এবিসি নিউজের একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়। ট্রেভর বলেন, ‘মিয়ানমারের আর্মি পরিকল্পিতভাবে দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে। এই বিভিষিকা নজিরবিহীন। আরো অবিশ্যাস্য হচ্ছে এর নেপথ্যে কারা সেটা।’ উপস্থাপক বলেন, ‘আমি জানতামওনা বৌদ্ধরা সহিংস হতে পারে। আমি যা জানতাম এটা তার সম্পূর্ণ উল্টো। আর একইরকম মর্মাহত করার মতো বিষয় হলো শান্তিতে নোবেলজয়ী একজন ক্ষমতার শিখরে থেকে এই সহিংসতা দেখছেন। আর তা উড়িয়ে দিচ্ছেন।’
এরপর বিবিসিতে দেয়া সুচির একটা সাক্ষাতকার দেখানো হয়। সেখানে সুচিকে প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনার কি এমন উদ্বেগ কখনো এসেছে যে আপনাকে বিশ্ব মনে রাখবে মানবাধিকারের এমন একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে যিনি কিনা জাতিগত নিধনযজ্ঞের বিরুদ্ধে দাড়াতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এর জবাবে সুচি বলেন, ‘না, আমার মনে হয় না কোন জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছে। আমার মনে হয় যা হচ্ছে তা ব্যাখ্যা করতে জাতিগত নিধনযজ্ঞ এক্সপ্রেশনটা অনেক বেশি শক্ত।’
এই পর্যায়ে স্পষ্টত বিরক্ত উপস্থাপক ট্রেভর রূঢ় ঠাট্টা করে বলেন, বিষয়টা যেন জাতিগত নিধন বলার জন্য যথেষ্ট মানুষ হত্যা হয় নি। এটাকে হালকা পাতলা জাতিগত ছাফাই মনে করুন-এটাই কি বলতে চাইছেন।
মিয়ানমারের শাসন ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রন না থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন অনেকে বলছেন, সুচির এখানে কিছু করার নেই। কিন্তু এই ধরণের নৈতিক মানদ-সম্পন্ন একজন নেতার জন্য অনন্ত নিউ ইয়র্কের সাবওয়েতে প্রচলিত নিয়ম প্রযোজ্য হওয়া উচিত যেÑ কিছু দেখলে, সেটা বলুন (ইফ ইউ সি সামথিং, সে সামথিং)। সেটাই নিয়ম হওয়া উচিত। হ্যা কিছু দেখলে কিছু বলুন। আর এটাও বলবো, যখন আপনি কিছু বলার চেষ্টা করবেন তখন দয়া করে চেষ্টা করবেন ডনাল্ড ট্রাম্প না হওয়ার।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে তিনি বলেন, আমি কোন কিছু সমাধান করতে পারবো না। আমি মিয়ানমার সমস্যাও সামাধান করতে পারবো না। তবে, আমি এটা জানি যে, কে কে নোবেল পাচ্ছেন আর কখন পাচ্ছেন সেই পদ্ধতিতে আমাদের পরিবর্তন আনা উচিত।
