ঢাকা মহানগরের সরকারি স্কুলের অনেক শিক্ষকই ক্লাসে পাঠদানে মনোযোগী নন। বছরের পর বছর ধরে একই স্কুলে থেকে এসব শিক্ষকের একটি অংশ প্রাইভেট ও কোচিং–বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। এ জন্য রাজধানীর ২৪টি সরকারি স্কুলের ৫২২ শিক্ষকের বদলির সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের এ উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনবে—এ বিষয়ে প্রথম আলোর ফেসবুকের পক্ষ থেকে পাঠকদের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল। পাঠকেরা সেখানে নানা ধরনের মন্তব্য করেছেন।
এ প্রস্তাব সমর্থন করেছেন অনেক পাঠক। রফিক লিখেছেন, ‘সঠিক উদ্যোগ। কারণ, এতে ক্লাসে পাঠদান বাড়বে। ধনী-গরিব সব ছাত্র সমান শিক্ষা পাবে। শিক্ষকেরাও তাকে বেশি নম্বর দেবেন না, যে ছাত্রছাত্রী ওনার কাছে প্রাইভেট পড়েছে। ভালো, খুব ভালো উদ্যোগ।’
নূর মোহাম্মদ আলী খান লিখেছেন, ‘এ ধরনের শিক্ষকদের কারণে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে শিক্ষা নেই বললেই চলে। এঁদের কারণেই শিক্ষা স্কুল-কলেজ থেকে ট্রান্সফার হয়ে কোচিং সেন্টার, প্রাইভেট সেন্টারে চলে গেছে। এঁদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
আবিদ হোসাইন মানু লিখেছেন, ‘দুদককে ধন্যবাদ। তবে তাঁদের বড় ধরনের জরিমানা করা উচিত এবং এসব কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সবাইকে অবগত করতে হবে। তা না হলে এঁরাই শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
এ কে এম রেজাউল করিম লিখেছেন, ‘ভালো সুপারিশ করেছে। ওনারা শিক্ষা অধিদপ্তরকে বশ করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। আর যাঁরা যুগের পর যুগ ঢাকার বাইরে চাকরি করছেন, তাঁদেরও সুযোগ দেওয়া উচিত।’
অন্যদিকে প্রস্তাবটির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। আমজাদ এইচ মুরাদ লিখেছেন, ‘দেখুন, যদি স্কুলে যথাযথ পড়ালেখা হয়, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে তেমন কোনো পড়ালেখা হয় না। শুধু হাজিরা নেওয়া হয়। পুরো সিলেবাসটা কোচিং সেন্টারগুলো শেষ করে। আর এটাই বাস্তবতা। সুতরাং অন্তত পড়ালেখার জন্য হলেও কোচিং সেন্টার দরকার। সেটার মালিকানা স্কুলশিক্ষকের হোক বা অন্য কারও হোক।’
সিরাজ প্রামাণিক লিখেছেন, ‘একজন শিক্ষক যে বেতন-ভাতা পান, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। তাই বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে কোচিং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’
শামীম চৌধুরী লিখেছেন, ‘কোচিং–বাণিজ্য তো শেষ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে কিছু একটা করা দরকার। সরকার যদি একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিত, তাহলে সবাই উপকৃত হতো। ধরা যাক, সব বিষয়ে পড়ার চার্জ হতে হবে ৫০০ টাকা। এর বেশি নিতে পারবে না। আর সেটা নিতে হবে ব্যাংকের মাধ্যমে।’
শিক্ষার্থীরা যাতে সুফল ভোগ করতে পারে, এ জন্য শুধু এ উদ্যোগ নয়, একই সঙ্গে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন অনেক পাঠক। তন্ময় রয় লিখেছেন, ‘শুধু বদলি করে সমাধান আসবে না। যাঁরা কোচিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে শিক্ষা–বাণিজ্য করছেন, তাঁদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক।’
জুলফিকার আলী লিখেছেন, ‘প্রশাসনের ওপরের মহলের জঞ্জাল পরিষ্কার না করে নিচের জঞ্জাল পরিষ্কার করলে কোনো লাভই হবে না। ওপর মহলকে ম্যানেজ করেই নিচের মহলে সমস্ত অপকর্ম হয়!’
জারা রহমান লিখেছেন, ‘বর্তমানে সরকারি স্কুল-কলেজে কোনো পড়াশোনা হয় না। বছরের বেশির ভাগ দিনেই কোনো না কোনো পরীক্ষা থাকে। যে কারণে ক্লাস হয় না। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা কী করবে। আর শিক্ষকদেরও কিছু করার নেই। কারণ, বর্তমানে শুধু বেতন দিয়ে সংসার চালানো যায় না। শিক্ষকদের ব্যবস্থা না নিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার মান বাড়ানো উচিত।’
শিক্ষার্থীদের সমস্যার ভিন্ন ভিন্ন দিক নিয়েও কথা তুলেছেন কেউ কেউ। সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘এটাতে শিক্ষার্থীদের বরং ক্ষতি হবে। আমাদের মতো গ্রামের শিক্ষার্থীদের কথা একবার ভাবুন। সায়েন্সের কোনো ভালো শিক্ষক সেখানে মেলে না। যদি কলেজের এসব শিক্ষকের কাছে আমরা পড়তে না পারি, তাহলে সেটার জন্য আমাদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।’
স্মার্ট নিউজ টোয়েন্টিফোর