খুলনায় ওসিসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. শাহ জালাল ওরফে শাহজামালের চোখ তুলে ফেলার অভিযোগে খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দাখিল হয়েছে। মামলার আসামিদের মধ্যে ১১ জনই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। দাবি করা টাকা না পেয়ে পুলিশ শাহজামালকে ছিনতাইকারী অভিহিত করে দুই চোখ উপড়ে ফেলে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিমের আমলি আদালতে গতকাল বৃহস্পতিবার মামলাটি দাখিল হয়েছে। নগরীর খালিশপুর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির মো. জাকির হোসেনের স্ত্রী রেনু বেগম বাদী হয়ে এজাহার দাখিল করেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, দাবি করা দেড় লাখ টাকা না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তাঁর ছেলে মো. শাহ জালালের দুটি চোখ উৎপাটন করা হয়েছে। মামলায় মোট ১০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে বিচারক শহিদুল ইসলাম আদেশের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন।
এজাহারে খালিশপুর থানার ওসি নাসিম খান ছাড়াও আসামি করা হয়েছে এসআই রাসেল, এসআই তাপস রায়, এসআই মোরসেলিম মোল্লা, এসআই মিজান, এসআই মামুন, এসআই নূর ইসলাম, এএসআই সৈয়দ সাহেব আলী, আনসার সদস্য আফসার আলী, আনসারের ল্যান্স নায়েক আবুল হোসেন ও নায়েক রেজাউলকে। আরো আসামি করা হয়েছে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত খালিশপুর পুরাতন যশোর রোড এলাকার সুমা আক্তার ও শিরোমনি বাদামতলা এলাকার লুত্ফুর হাওলাদারের ছেলে রাসেলকে।
স্বজনরা জানায়, শাহ জালাল স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সুবিদপুর গ্রামে থাকেন।
সেখানে কাঁচামালের ব্যবসা করেন। গত ১৮ জুলাই বেড়াতে আসেন খুলনা নগরীর নয়াবাটি রেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুরবাড়িতে। কাছেই থাকেন তাঁর বাবা জাকির হোসেন ও মা রেনু বেগম। সেদিন রাত ৮টায় শাহ জালাল শিশুকন্যার দুধ কিনতে বাইরে বের হন। এ সময় পুলিশের দুজন সোর্স কৌশলে তাঁকে ডেকে নিয়ে যান খালিশপুর থানায়। বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় স্বজনরা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে থানায় যায়। সেখানে ওসি নাসিম খান তাঁকে ছাড়ানোর জন্য দেড় লাখ টাকা দাবি করেন পরিবারের সদস্যদের কাছে। অন্যথায় তাঁকে ‘শেষ করে ফেলা হবে’ বলে হুমকি দেন। স্বজনরা পুলিশের দাবি করা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও থানার সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তারা শাহ জালালকে পুলিশের গাড়িতে করে নিয়ে বাইরে যান। এরপর রাতে আর তাঁকে থানায় ফেরত আনা হয়নি। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর স্বজনরা বাসায় ফিরে যায়।
পরিবারের সদস্যরা ১৯ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টার দিকে থানায় গিয়ে জানতে পারে, সেখানে শাহ জালাল নামে কেউ আটক নেই। পরে খোঁজখবর নিতে গিয়ে জানতে পারে, খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ১০-১১ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন তাঁর দুটি চোখ উপড়ানো অবস্থায় ছিল। স্ত্রী, শাশুড়িসহ অন্যরা বিষয়টি জানতে চাইলে শাহ জালাল ঘটনার বর্ণনা দেন। পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে গোয়ালখালী হয়ে বিশ্বরোডের (খুলনা বাইপাস সড়ক) নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁর হাত-পা চেপে ধরে এবং মুখের মধ্যে গামছা ঢুকিয়ে কয়েকজন স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুটি চোখ উপড়ে ফেলে বলে শাহ জালাল দাবি করেন।
08/09/2017