বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সরকারের সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ এবং ‘ওয়ান-ইলেভেনের’ মতো রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ‘সম্ভাবনা’ সম্পর্কে বেশ কিছু খোলামেলা মন্তব্য করেছেন।
সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ান ইলেভেনের মতো ঘটনার যাতে কোন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্যে তিনি আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, “ওয়ান ইলেভেনের কোন দরকার হবে না। কারণ কোন অন্যায় হলে তার বিরুদ্ধে সরকারই ব্যবস্থা নেবে। আর এই অন্যায় যারাই করুক।”
কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকায় হঠাৎ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরই ছাত্র এবং যুব সংগঠনের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু ব্যবস্থা নেয় সরকার। ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ বাংলাদেশে নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু কোন সরকার নিজের দলের লোকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে, এমনটি সচরাচর দেখা যায় না।
তখন থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, কেন হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এতটা কঠোর অবস্থান নিলেন।

এক এগারোর পর সেনা সমর্থিক সরকারের প্রধান ফখরুদ্দীন আহমেদ ভাষণ দিচ্ছেন টেলিভিশনে
এরকম একটা প্রেক্ষাপটেই ওয়ান ইলেভেনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রীকে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সম্পর্কে প্রশ্নটি করেছিলেন একজন সাংবাদিক। তার উত্তরে তখন শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রশ্নটি কী ছিল?
নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ মিশনে এই সংবাদ সম্মেলনে মূলত প্রবাসী সাংবাদিকরাই প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার সুযোগ পান। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধি লাবলু আনসার জানান, তিনিই ওয়ান ইলেভেন এবং দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের প্রসঙ্গটি তোলেন।
লাবলু আনসার জানতে চান, বাংলাদেশে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, এতে কেবলমাত্র রাজনীতিকদের টার্গেট করা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের টার্গেট করেই যেন অভিযানটি চলছে। বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেনের আগে রাজনীতিকদের চরিত্র হননের জন্য যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, এখন সেধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কীনা।

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ: এক এগারোর অন্যতম কুশীলব
উত্তরে শেখ হাসিনা যা বললেন:
“ওয়ান ইলেভেনের যাতে কোন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্যে আগে থেকে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
“আমি এটুকু বলতে পারি যে ওয়ান ইলেভেন হওয়া লাগবে না। কোন অন্যায় হলে, তার ব্যবস্থা আমি নেব। আমরাই নেব সেটা। সে আমার দলের হোক, আর যেই হোক। আর যদি আমি বিচার করতে যাই, আগে তো ঘরের থেকেই শুরু করতে হবে।”
“ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে, আর ওদিকে হালাল মাংস খুঁজবে। আমার ওপর অনেকে অখুশি হতে পারে। কিন্তু আমার কিছু আসে যায় না। তারপর কোন ট্যাক্স দেবে না। এগুলো তো হতে পারে না।”
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “এটা করতে হবে এই জন্যে, আমরা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। উন্নয়নের জন্য আমরা প্রকল্প তৈরি করছি। অর্থ বরাদ্দ করছি। কাজ হচ্ছে। আমরা চাই তার প্রতিটি পাই পয়সা যেন যথাযথভাবে ব্যবহার হয়, যথাযথভাবে খরচ হয়। আর সেখানে যদি কোন অনিয়ম হয়, উন্নয়ন তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”
সূত্র: BBC Bangla