ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে হচ্ছে বাংলা। ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দিতেও হবে বাংলা নাম। গতকাল শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। গত বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের নাম পরিবর্তন করে বাংলা রাখলেও ইংরেজিতে এই নাম রাখা হয় বেঙ্গল আর হিন্দিতে বাঙ্গাল।
মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্তের পর গত বছর ২৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। পরে নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব যথারীতি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার একই রাজ্যের তিন ভাষায় তিনটি নাম থাকায় আপত্তি তুলে তা জানিয়ে দেয় রাজ্য সরকারকে। এরপরই রাজ্য মন্ত্রিসভা শুক্রবার বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।
গতকালকের মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাজ্যের শিক্ষা ও পরিষদীয় দপ্তরের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যের নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তা পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। বহুদিন অপেক্ষা করার পরও কোনো ইতিবাচক উত্তর মেলেনি। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, রাজ্যের ক্ষেত্রে একটি নাম হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তাই কেন্দ্রের প্রস্তাব মেনে শুধু ‘বাংলা’ নামকরণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে।
রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাসের পর গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাসের ঘটনা আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশা করি রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন।’ বলেছিলেন, ‘বাংলা নামে আমরা আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো।’ মমতা বলেন, ‘যুগের প্রয়োজনে কখনো সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়। আমরা সেই পথে এগিয়ে আমাদের রাজ্যের নাম বাংলা করেছি। কবিগুরুর নানা লেখায় ফুটে উঠেছে এই বাংলা নামের কথা।’ পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় গত বছরের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা ও বঙ্গ। তবে অধিকাংশের মত ছিল বাংলা নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপর এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ হয় বিধানসভার অধিবেশনে।
সেদিন অবশ্য কেউ কেউ বলেছিলেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধে কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’
এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তরপ্রদেশ, হায়দরাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য ভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড, উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের পরিবর্তে কেরালা এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য।
২০১১ সালে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় প্রথম আসার পর মমতা আগস্ট মাসে এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। তখন সেখানেই উঠে আসে ওয়েস্ট বেঙ্গলের নাম ইংরেজিতে পশ্চিমবঙ্গ লেখা হোক। বৈঠকে এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর তা পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অনুমোদনের জন্য। ২০১৪ সালে কেন্দ্র-রাজ্যবিষয়ক তৎকালীন যুগ্ম সচিব সুরেশ কুমার জানিয়ে দেন, সংবিধান সংশোধন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সংসদে আনা হবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অল্টারেশন অব নেম-অ্যাক্ট ২০১৪’ নামের একটি সংশোধনী বিল। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও সংসদে আসেনি সেই বিল।