‘বয়কট ফ্রান্স’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে সোমবার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তারা ফ্রান্সবিরোধী শ্লোগান দেয়ার পাশাপাশি তারা প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর কুশপুত্তলিকা পোড়ায়।
ঢাকার বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে বেলা ১১টার পর থেকেই বিক্ষোভকারীরা জড়ো হতে থাকেন। এর আগে ভোর থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসতে শুরু করে।
অল্প সময়ের মধ্যেই মসজিদের দক্ষিণ প্লাজা এবং তার আশেপাশের প্রাঙ্গণে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপি পুলিশকে উদ্ধৃত করে বলছে, বিক্ষোভে অর্ধ লক্ষ মানুষ জড়ো হয়েছিল।
আন্দোলনকারীদের দাবী সেখানে লক্ষাধিক মানুষ ছিল।
হেফাজতে ইসলাম নামক একটি সংগঠনের আয়োজনে বিক্ষোভ হয়।
বিক্ষোভকারীরা ফরাসী দূতাবাস ঘেরাও করতে চেয়েছিল, কিন্তু শান্তিনগরে পুলিশ তাদের আটকে দেয়।
পরে সেখানেই তারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি শেষ করেন।
একসঙ্গে এতো মানুষের সমাবেশের কারণে কিন্তু বিজয়নগর, প্রেসক্লাব থেকে শুরু করে পল্টন ও গুলিস্তানের সড়কে যান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশ থেকে কয়েকটি দাবি তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা, বাংলাদেশে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করা, এবং বাংলাদেশ সরকার যেন সংসদ থেকে নবীর অবমাননার ঘটনায় ফ্রান্সের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে নিন্দা জানায়। এছাড়া ফ্রান্সের পণ্য বয়কট করারও আহ্বান জানানো হয়।
এর আগেও একাধিক দিন ফ্রান্স বিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা ঢাকার বারিধারা এলাকায় থাকা ফরাসি দূতাবাস ঘেরাও করতে চাইলেও প্রতিবারই পুলিশ তাদের পথিমধ্যে আটকে দেয়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে এএফপি।

বিক্ষোভকারীরা ঢাকার বারিধারা এলাকার থাকা ফরাসী দূতাবাস ঘেরাও করতে চাইলেও পুলিশ তাদের পথিমধ্যে আটকে দেয়।
গত মাসে ফ্রান্সে স্যামুয়েল প্যাট্টি নামে এক স্কুল শিক্ষক তার ক্লাসে বিতর্কিত শার্লি এবদো পত্রিকায় প্রকাশিত ইসলামের নবীর কার্টুন প্রদর্শন করেন।
তার জেরে ওই শিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করা হয়, যেটাকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ ‘ইসলামি সন্ত্রাসী হামলা’ বলে উল্লেখ করেন।
ওই হত্যাকাণ্ড ফ্রান্সে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মি. ম্যাক্রঁ বলেন, তার দেশ ধর্মীয় কার্টুন প্রকাশের অধিকার রক্ষা আইন বহাল রাখবেন।
এরপর থেকেই মুসলিম বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
ঢাকায় ফ্রান্স-বিরোধী আরেকটি বড় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় গত সপ্তাহে। এটিও ছিল হেফাজতে ইসলামের।
ওই সমাবেশে অংশ নিতে ঢাকার বাইরে থেকে বহু মানুষ সমাবেশে অংশ নিতে আসে বলে জানা যায়।
সংগঠনটির নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন বাংলাদেশ সংসদের পক্ষ থেকে ম্যাক্রঁর নিন্দা জানানোর পদক্ষেপ নেন।
ওই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিনি বলেন, “আমি ব্যবসায়ীদের ফরাসি পণ্যগুলি ফেলে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমি জাতিসংঘকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানাই।”
গত মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত আরেকটি বড়সড় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল দাবি জানায় ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের।
সূত্র: BBC Bangla