টেস্ট ক্রিকেটেও নতুন বাংলাদেশ। শ্রীলংকা, ইংল্যান্ডের পর বিশ্ব ক্রিকেটের প্রথম সারির দল অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর গৌরব অর্জন করেছে বাংলাদেশ; বাঘের গর্জনে মাতাল ক্রিকেটবিশ্ব। টানা সাফল্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে যাচ্ছেন টাইগাররা। একের পর এক গৌরবময় সাফল্যে বিশ্বকে অনেক বড় বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। শুধু সীমিত ওভারের ক্রিকেটে নয়, টেস্টেও বাংলাদেশ পরিণত দল হতে যাচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের বর্তমান অবস্থান এবং অগ্রগতি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন দেশের সাবেক ক্রিকেটাররা। তাদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলে আমাদের সময় পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরেছেন ক্রীড়া প্রতিবেদক এম. এম. মাসুক
সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান
বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধাতস্থ হয়ে গেছে বাংলাদেশ। লংগার ভার্সনের ক্রিকেটেও এগিয়ে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো টিমকে হারানোর গৌরব অনেক বেশি। কিন্তু আমরা এ ফরম্যাটের খেলার সুযোগ কম পাই। আমরা যদি আরও বেশি ম্যাচ বিভিন্ন কন্ডিশনে, উইকেটে খেলার সুযোগ পাই তা হলে আরও এগিয়ে যাবে দল। বাংলাদেশ দলে প্রতিভার অভাব নেই। কম খেলার কারণেই কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে ম্যাচে নিজেদের সামলাতে হবে তা এখনো আমরা সেভাবে অভ্যস্ত নই। ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারণে আমরা চট্টগ্রামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছি। অসাধারণ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার বোলার নাথান লায়ন। দারুণভাবে উইকেটে মানিয়ে নিয়েছে সে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের ভালো করে রিড করেছে। আরেকটি ব্যাপার যেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেস্ট ক্রিকেটে স্পেশালিস্ট কিছু ফিল্ডার দরকার হয়। আমাদের স্পেশালিস্ট ফিল্ডার তৈরি করতে হবে। কে সিøপে, গালিতে, পয়েন্টে ফিল্ডিং করবে তা ঠিক করতে হবে ভালো করে। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকে বাংলাদেশ অনেক বড় বার্তা দিয়েছে। বিশ্বে সবার কাছেই দারুণ প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। আমরা আর আগের বাংলাদেশ নেই। দেশ ও দেশের বাইরে যে কোনো দলকে হারিয়ে দিতে পারি। বাংলাদেশের সাফল্যের পেছনে রয়েছে প্লেয়ারদের অধ্যবসায়, কমিটমেন্ট ও পেশাদারিত্ব। দু-চার জন প্লেয়ার ছাড়া বাংলাদেশ দলে কেউই স্থায়ী নয়। তাই প্রত্যেককেই পারফর্ম করে যেতে হয়। জাতীয় দলে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়েছে। বিসিবি অনেক ট্যুর ও সিরিজ আয়োজন করায় বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে প্লেয়াররা। গত দুই বছর থেকেই বিশ্বের কোনো দলই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছে না। সব দলই বাংলাদেশকে সমীহ করেই মাঠে নামছে। এ অবস্থান তৈরি করে ফেলেছে বাংলাদেশ দল।
সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম
বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে তাতে খুবই ভালো লাগছে। অনেক সুন্দর খেলছে বাংলাদেশ। ওয়ানডের মতো টেস্টেও ভালো করছে দল। কিন্তু সর্বশেষ সিরিজে আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং পজিশন স্থায়ী করা দরকার। কেননা মুমিনুল কোন জায়গায় ব্যাট করবে, ইমরুল কত নম্বরে খেলবেÑ এসব স্থায়ী করা উচিত।
শুধু দেশের মাটিতেই নয়, আমরা নিউজিল্যান্ডে গিয়ে ভালো খেলেছি। শ্রীলংকাকে হারিয়েছি। সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ। এ সিরিজ চ্যালেঞ্জিং হবে। আশা করি, সেখানেও দল নিজেদের মেলে ধরবে। আমরা যে ক্রিকেটে একের পর এক সাফল্য পাচ্ছি, তার পেছনে রয়েছেন অভিজ্ঞ পাঁচ ক্রিকেটার। সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি, মাহমুদউল্লাহ ও তামিমরা দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। অনেকের ক্যারিয়ার দশ বছরের। কেউ কেউ দুইশর বেশি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারাই দলকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন।
সামনে তিন-চার বছর আইসিসি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দলকে ওপরের সারিতে দেখতে চাই। টেস্টে তিন-চার নম্বরে। ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেললে এটা অসম্ভব নয়। তবে টেস্টে ফিল্ডিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্ডিংয়ে যদি আমরা এক নম্বরে আসতে পারি, তা হলে র্যাংকিংয়েও আমরা এগিয়ে যাব। ফিল্ডিংয়ে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে।
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল
গত চারটি সিরিজের মধ্যে আমরা তিনটিতেই ড্র করেছি। নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দল টেস্টে জয় কিংবা ড্র করতে না পারলেও লড়াকু ক্রিকেট খেলেছে। শ্রীলংকা, ইংল্যান্ড ও সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খুবই ভালো খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে ছোটখাটো কিছু ভুল ছিল। খুব সুন্দর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু চট্টগ্রামের উইকেট ভালো ছিল না। জেতার জন্য উইকেট ছিল না। যেমনটা ঢাকায় স্পিনবান্ধব উইকেট ছিল। স্পিনাররা দারুণ খেলেছেন। কিন্তু ঢাকার মতো চট্টগ্রামে সাকিবরা ভালো করতে পারেনি। হয়তো বৃষ্টির চিন্তা-ভাবনা নিয়ে উইকেট তৈরি করা হয়েছিল। তবে আমাদের দারুণ সুযোগ ছিল ২-০তে সিরিজ জেতার।
বাংলাদেশ দল সঠিক রাস্তায় আছে। সর্বশেষ টেস্টে মুমিনুলের মতো খেলোয়াড় আটে ব্যাট করেছে। ঢাকা টেস্টে তাকে স্কোয়াডেই রাখা হয়নি। কিন্তু এ ব্যাপারে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম জানিয়েছেন, কিছুই জানেন না। এত দিন ধরে দলের অধিনায়কত্ব করছেন মুশফিক। এটা খুবই দুঃখজনক। তার এ ব্যাপারে কিছু বলার ছিল। এসব জায়গায় আরও ভূমিকা রাখতে হবে তাকে।
বাংলাদেশের সাফল্যের কারিগর সিনিয়র তিন-চারজন ক্রিকেটার। দীর্ঘ সময় ধরে তারা খেলছেন। সাকিব-তামিম-মুশফিকরা ভালো খেলছে বলেই জয় পাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু তারা যদি কোনো ম্যাচে ভালো না করে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হারছে। তারা যতদিন দলকে সার্ভিস দিয়ে যেতে পারবে দল আরও ভালো করবে।
টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশ পরিণত দল হচ্ছে। বিশ্ব ক্রিকেটের সবাই জানে বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার রয়েছে। সৌম্য সরকার, মিরাজ, মোস্তাফিজের মতো যারা আসছে তাদের শরীরী ভাষাও বদলে যাচ্ছে। আত্মবিশ্বাস থাকার কারণেই মাঠে শরীরী ভাষা আগ্রাসী দেখা যাচ্ছে ক্রিকেটারদের। এজন্য সাফল্যও আসছে। আশা করি, দল আরও এগিয়ে যাবে।
সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ হবে চ্যালেঞ্জিং। কেননা সেখানকার উইকেট হবে ভিন্ন। যদিও উইকেটে রান আসবে প্রচুর। সে ক্ষেত্রে পেস বোলারদের দায়িত্ব বেড়ে যাবে। তাদের ভালো করতে হবে। যেটা আমরা নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি। পেস বোলাররা ভালো করলে সেখানেও আমরা সাফল্য পেতে পারতাম।
09/09/2017