সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বিদেশি সৈন্যদলের উপস্থিতি উপসাগরীয় অঞ্চলকে অনিরাপদ করে তুলছে। তিনি বিদেশি শক্তিগুলোকে উপসাগরীয় অঞ্চলের জন্য হুমকি বিবেচনা করে তাদেরকে এর বাইরে থাকার আহ্বান জানান। আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনে ইরান মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
গতকাল রবিবার ইরানের সামরিক প্যারেড বার্ষিকী এবং ১৯৮০-১৯৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধ শুরুর বার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে হাসান রুহানি এসব মন্তব্য করেন। ভাষণটি সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।
ইরানি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিদেশি শক্তি বরাবরই দুঃখ-দুর্ভোগ নিয়ে আসে এবং তাদেরকে অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি অতীতে এ অঞ্চলে বিদেশি সেনা মোতায়েনকে ‘বিপর্যয়’ মন্তব্য করে বলেন, তাদেরকে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বাইরে থাকতে হবে।
গত শুক্রবার পেন্টাগন সৌদি আরবে মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের ঘোষণা দেয়। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের অনুরোধে সেখানে সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে বলেও মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের দুটি তেল শোধনাগারে ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা হামলা চালালে দেশটির তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। এ হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানকে দায়ী করে আসছে। এ প্রেক্ষাপটে সৌদিতে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় পেন্টাগন।
ইরানি প্রেসিডেন্ট গতকাল তাঁর ভাষণে বলেন, ‘বিদেশি শক্তি আমাদের জনগণের এবং এ অঞ্চলের জন্য অনেক সমস্যা ও অনিরাপত্তা সৃষ্টি করতে পারে।’ তিনি জাতিসংঘে কয়েক দিনের মধ্যে শান্তি পরিকল্পনা পেশ করবেন উল্লেখ করে বলেন, ‘এই সংকটময় মুহূর্তে আমরা আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি এই ঘোষণা দিচ্ছি যে আমরা আমাদের বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।’ আশা করা হচ্ছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে আজ সোমবার নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দেবেন রুহানি।
বিদেশি শক্তিগুলোকে এ অঞ্চলের বাইরে থাকার আহ্বান জানিয়ে রুহানি বলেন, ‘তারা যদি আন্তরিক হয় তাহলে তাদের উচিত হবে না আমাদের অঞ্চলকে অস্ত্র প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র বানানো।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের যুক্তি হচ্ছে পারস্য উপসাগরীয় যুক্ত, যার নিরাপত্তা নিজেদের ভেতর থেকে আসবে।’
হুতিদের শান্তি প্রস্তাব, স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘ
ইয়েমেনে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত মার্টিন গ্রিফিথস সৌদি আরবে হুতি বিদ্রোহীদের হামলা বন্ধের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এর ফলে বছরের পর বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটতে পারে। গ্রিফিথস বলেন, হুতিরা এই প্রস্তাব আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করলে তা হবে যুদ্ধ অবসানে একটি কঠোর বার্তা।
ইরানের মদদপুষ্ট হুতি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের অন্যান্য অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে আসছে। এই জোট বাহিনী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইয়েমেন সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে ইয়েমেনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে।
শনিবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে গ্রিফিথস সংঘাত বন্ধে রাজনৈতিক সমাধানে হুতিদের আগ্রহের প্রশংসা করেন।
হুতিরা শুক্রবার শান্তি উদ্যোগের অংশ হিসেবে সৌদি আরবে হামলা বন্ধের প্রস্তাব দেয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ প্রস্তাবের বিষয়ে সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও গ্রিফিথস জোর দিয়ে এই সুযোগের সুবিধা নেওয়া এবং সহিংসতা বন্ধে সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সূত্র : বিবিসি, এএফপি।