রোহিঙ্গা সংকটের মধ্যেই মিয়ানমার সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রি করতে চাইছে ভারত। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে। মিয়ানমারের নৌপ্রধানের নয়াদিল্লি সফরে এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ভারতীয় কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ সংবাদ প্রকাশ করে।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মিয়ানমারের নৌবাহিনী সদস্যদের প্রশিক্ষণের বিষয়েও দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে।
নয়াদিল্লিভিত্তিক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের ভারতের প্রতিবেশী-নীতি বিশেষজ্ঞ কে ইওমে বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সমালোচনা করছে সে সময় উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তাদের আনছে ভারত সরকার, এটা একটি বার্তা দিচ্ছে। বার্তাটি হচ্ছে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও ভারত মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আছে।
সম্প্রতি মিয়ানমারে কয়েকটি পুলিশ চেকপোস্টে হামলার ঘটনায় দেশটিতে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে সেনাবাহিনী। ওই ঘটনার পর থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘শুদ্ধি অভিযান’র নামে রাখাইন রাজ্যে নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘরে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনায় ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা চার লাখ ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার হচ্ছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারে রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংকট নিরসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে দ্রুত শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প।
এছাড়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা এবং রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ঘটনায় দেশটির ওপর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জেইদ রাদ আল হুসেইন। রোহিঙ্গাদের প্রতি সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য।
ব্রিটিশ সরকারের একজন মুখপাত্র মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে চলমান সহিংসতা, এর কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট এবং সেখানে মানবাধিকার লংঘনের যেসব ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে আমাদের গভীর উদ্বেগের কারণে সেখানকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধানে না আসা পর্যন্ত বার্মিজ সেনাবাহিনীর সব শিক্ষা কোর্স স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।