রোহিঙ্গাদের ওপর ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৮টার দিকে নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ বলেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে হত্যা, নিপীড়ন, ধর্ষণ, বলপ্রয়োগে উচ্ছেদের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুরুতরভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী যে নিপীড়ন চালিয়েছে তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল। সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধ সঙ্ঘটনের ক্ষেত্রগুলো হলো: ক) কোনো জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তরিত ও বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করা, খ) হত্যা, গ) ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন সন্ত্রাস এবং ঘ) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রোম স্ট্যাচু’র বিবেচনায় নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ এবং ২০১৬ সালে উগ্র বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং রাখাইনের বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভূক্তরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল তখনও মানবতাবিরোধী অপরাধ সঙ্ঘটনের জন্য মিয়ানমার সরকারকে দায়ী করেছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
আইসিসির রোম স্ট্যাচু এর সংজ্ঞা অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধ হলো এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড যা জেনেশুনেই কোনো বেসামরিক জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিস্তৃত ও কাঠামোবদ্ধ হামলা আকারে পরিচালনা করা হয়। এ ধরনের হামলা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় অথবা সাংগঠনিক নীতির অংশ হতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনি বিচারব্যবস্থা অনুযায়ী এ হামলা হতে হবে বিস্তৃত কিংবা কাঠামোবদ্ধ, তবে দুটোই হওয়া প্রয়োজন। হামলার বিস্তৃতর মানে হলো ‘অপরাধের মাত্রা কিংবা ঘটনার শিকার মানুষদের সংখ্যা’ এবং কাঠামোবদ্ধ হামলা দিয়ে বোঝায় ‘পদ্ধতিগত পরিকল্পনা’।
এইচআরডব্লিউ’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবতাবিষয়ক আইনে বলা আছে মানবতাবিরোধী অপরাধ যে কেবল সামরিক হামলার ক্ষেত্রে হবে তা নয়। কারণ মানবতাবিরোধী অপরাধ সশস্ত্র সঙ্ঘাতমুলক প্রেক্ষাপটের মধ্যে কিংবা এর বাইরেও হতে পারে। তাছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধ মানে যে কেবল একটি এলাকার গোটা জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা পরিচালনা করা, তা নয়।
হিউম্যান রাউটস ওয়াচ মনে করে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর বিস্তৃত ও কাঠামোবদ্ধ হামলা চালিয়েছে। এর আগে স্যাটেলাইটে ধারণকৃত ছবিতে দেখা গেছে, যে এলাকায় জ্বালাও পোড়াও এর আলামত পাওয়া গেছে তা রাখাইন রাজ্যের ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে নভেম্বরে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জ্বালাও-পোড়াওয়ের তৎপরতা নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল।
হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদেরকে স্থানান্তরিত ও বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য করেছে। আইসিসি পূর্ববর্তী সব বড় বড় আন্তর্জাতিক অপরাধের দলিলেই বিতাড়নকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর এক প্রতিবেদনে এইচআরডব্লিউ জানিয়েছিল, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ২১৪টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইটে তোলা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ছবিতে রাখাইনের মংডু এবং রাথেডং এলাকায় হাজার-হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংসের চিহ্ন দেখা গেছে।
এখনো জ্বলছে রোহিঙ্গা গ্রাম : অ্যামনেস্টি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিম–অধ্যুষিত গ্রামগুলো এখনো আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভিডিও ও স্যাটেলাইট ছবির ভিত্তিতে জানিয়েছে, গ্রামের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবারও ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা গেছে।
স্থানীয়ভাবে পাওয়া ভিডিও এবং উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি শুক্রবার বলেছে, রোহিঙ্গারা ফিরলে তারা যে বসবাস করবে সেই উপায়ও রাখছে না মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্রাইসিস রেসপন্স বিভাগের (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা) পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, সু চি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে মিয়ানমারে আর কোনো সেনা অভিযান হয়নি। কিন্তু এসব তথ্য–প্রমাণ তাঁর দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।
দুই দিন আগে জাতিসঙ্ঘে ভাষণে মিয়ানমারের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভান থিও বলেন, রাখাইনে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে।
তাদের বক্তব্যের পর অ্যামনেস্টি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, রাখাইনে এখনও যে বাড়ি-ঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে, তার অন্তত তিনটি ভিডিও পেয়েছেন তারা।
২২ সেপ্টেম্বরের উপগ্রহ চিত্রেও রোহিঙ্গা গ্রামে জ্বালিয়ে দেয়া ঘর থেকে ওড়া ধোঁয়া চিহ্নিত করার কথাও জানায় মানবাধিকার সংস্থাটি।
সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, তিন সপ্তাহ পরেও আমরা দেখছি, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অবসান হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর, গ্রাম জ্বলছেই। মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ফেরার কোনো উপায়ই রাখা হচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার রাখাইনের হাপর ওয়াট চুয়াং নামে গ্রামের কাছে ধারণ করা ভিডিও এসেছে অ্যামনেস্টির কাছে। তাতে দেখা গেছে, গ্রামের কৃষিজমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা আগুনে পুড়ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে জানান, মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এবং নজরদারি দলের সদস্যরা গতকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে বিভিন্ন জায়গায় অগ্নিসংযোগ করে। একই দিন কিছু সময় পরে আবার অগ্নিসংযোগ করা হয় গ্রামের বিভিন্ন এলাকায়।
ওই গ্রাম থেকে পাওয়া স্যাটেলাইট ছবিগুলো অ্যামনেস্টি ১৬ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পর্যালোচনা করে। সর্বশেষ ২২ সেপ্টেম্বরেও ওই গ্রাম থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। ওই দিনের ছবিতে দেখা গেছে, কয়েক দিন আগেও গ্রামে যেসব স্থাপনা ছিল, সেগুলোও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
বুথিডং এলাকায় নাগা ইয়ান্ট চুয়াং গ্রামের বাইরে ধারণ করা আরও দুটি ভিডিওর ভিত্তিতে অ্যামনেস্টি বলছে, গতকাল বিকেলেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। রাখাইন রাজ্যের একটি সূত্র অ্যামনেস্টিকে জানিয়েছে, গতকাল স্থানীয় সময় বেলা দেড়টা থেকে দুইটা পর্যন্ত এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
রাখাইনে এই জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধে মিয়ানমারকে চাপ বাড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।
মিয়ানমারে দমন-পীড়নের শিকার ৪ লাখ রোহিঙ্গা গত তিন সপ্তাহে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগে থেকে ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে বাংলাদেশে।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের সহিংসতা নিয়ে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসছে। এছাড়া নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সঙ্কট নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরিসের বক্তব্য শুনবেন।
কূটনীতিকরা একথা জানিয়েছেন।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে মিয়ানমারে সামরিক দমনপীড়নের কারণে চার লাখ ৩০ হাজারের বেশি লোক পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং অপর চারটি দেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিষদ এ বৈঠকে করতে যাচ্ছে। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এসব লোকের অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলিম।
মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেনও আবেদন জানায়।
দেশগুলোর কোনটিই জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য নয়।
জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারের এই সামরিক অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গত সপ্তাহে আবারো এটিকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান সংখ্যালুঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে ‘বৌদ্ধ সন্ত্রাস’ চালানোয় মিয়ানমারকে দায়ী করে এ গণহত্যার কঠোর নিন্দা জানান।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও সরকারি দফতরে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে এ সামরিক অভিযান শুরু করা হয়।
এদিকে এ বিষয়ে উন্মুক্ত অধিবেশনে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যের আগে মঙ্গলবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মিয়ানমারের হালনাগাদ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হবে।
এর আগে এ মাসের গোড়ার দিকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছিল।- এএফপি
’রোহিঙ্গাদের প্রতি যে নির্যাতন করা হয়েছে তা মর্মান্তিক’
জাতিসঙ্ঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার আর এর সমাধানও করতে হবে মিয়ানমারকে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হয়েছে, তা মর্মান্তিক। অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা নির্যাতন বন্ধ করে তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। একই সাথে রোহিঙ্গারা যত দিন বাংলাদেশে থাকবে তত দিন তাদের সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতার জন্যও আহ্বান জানান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি গত শনিবার বাংলাদেশে আসেন রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখার জন্য। রোববার তিনি কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন, যেখানে গত এক মাসে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখে আসার পর গতকাল তিনি ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ফিলিপ্পো বলেন, আমি অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সাথে কথা বলেছি। এদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে। তারা নির্যাতনের যেসব বর্ণনা দিয়েছে, তা খুবই মর্মান্তিক ও ভয়াবহ। নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছে। তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। তারা খুবই শোকাহত, আতঙ্কিত। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আশ্রয় পেলেও তারা অনেক কঠিন সমস্যার মধ্যে রয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক ছোট এলাকায় গাদাগাদি করে আছেন রোহিঙ্গারা। পরিস্থিতি খুবই নাজুক। সাড়ে চার লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন। কক্সবাজার জেলার জনসংখ্যা ২৫ লাখ। ফিলিপ্পো বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে স্থানীয় জনসাধারণ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।
ফিলিপ্পো বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণসহ বাংলাদেশের মানুষ রোহিঙ্গাদের প্রতি যেভাবে উদার সহায়তার হাত বাড়িয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে তা সত্যিই অভিভূত হওয়ার মতো ঘটনা। রোহিঙ্গাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সর্বপ্রকার সহায়তার জন্য তিনি বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানান। একই সাথে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা শুধু শরণার্থী নন, বরং স্ট্রেটলেসও। তাদের কোনো নাগরিকত্বও নেই। সীমিত জায়গায় তারা পরস্পর ভাগাভাগি করে থাকছেন। একে অপরের প্রতি একাত্মতা দেখাচ্ছেন। তাদের সমস্যা খুবই প্রকট। সবার আগে তাদের দরকার আশ্রয় ও খাদ্য। অনেক পরিবার আছে যারা এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে কোনো খাবার পায়নি। আশ্রয় সমস্যা খুবই তীব্র। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তাদের নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। অনেক তাঁবু দরকার। একই সাথে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা দরকার। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের তাৎক্ষণিক এ সমস্যা সমাধানে কমপক্ষে ৭৭ মিলিয়ন ডলার দরকার।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে অবিলম্বে মিয়ানমারকে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। সবার আগে মিয়ানমারকে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।
ফিলিপ্পো বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেন সে জন্য সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। রাখাইনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে সেখানে তারা ফিরে যেতে চাইবেন না। তারা যেতে না চাইলে তাদেরকে জোর করে আমরা পাঠিয়ে দিতে পারি না।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিয়ে তাদেরকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, যত দিন তারা বাংলাদেশে আছেন তত দিন তাদের সব ধরনের সহায়তা করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। তারা সব কিছু হারিয়েছেন। সবার আগে তাদের দরকার নিরাপত্তা। তিনি বলেন, দক্ষিণ সুদান, ইয়েমেন ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গাদের সমস্যা তাদের কাছে এখন সবার প্রথমে বিবেচ্য বিষয়।
রাখাইনে সেফ জোন প্রতিষ্ঠা বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো বলেন, এটি মিয়ানমারকে করতে হবে। তাদের রাজি করাতে হবে। যদি তারা রাজি না হয় সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এটি করতে হবে। সে জন্য তাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় আছে।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আনান কমিশনে তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার স্পষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে। এটি খুবই পরিষ্কার। তাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে।
রোহিঙ্গারা শরণার্থী কি না এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফিলিপ্পো বলেন, অবশ্যই তারা শরণার্থী এবং এটি পরিষ্কার।