২০১৬ সালে সেই ফিরে আসার সার্থকতা মেসি প্রমাণ করলেন আজ কোপা আমেরিকার ফাইনালে। ব্রাজিলকে তাদেরই মাটিতে ১–০ গোলে হারিয়ে শিরোপার দেখা পেয়েছেন মেসি। দেশের হয়ে তাঁর প্রথম শিরোপা, ২৮ বছর অপেক্ষার পর আর্জেন্টিনারও প্রথম শিরোপা জয়।অধিনায়ক মেসি এবারের কোপায় অলরাউন্ডার পারফরমেন্স করেছেন। তিনি এবারের আসরে মোট চারটি গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন। এর মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো কোপার গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছেন এই ফুটবল জাদুকর। মেসি যে শুধুমাত্র গোল করেছেন তাই নয়, সতীর্থদের দিয়ে গোল করিয়েছেনও। চারটি গোল করার পাশাপাশি দলকে গোল করতে সহায়তা করেছেন পাঁচটি। যা কোপার ইতিহাসে অনন্য এক রেকর্ড।কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলকে ডি মারিয়ার একমাত্র গোলে হারিয়ে শিরোপা জয় করেছে আর্জেন্টিনা। এর মাধ্যমে ১৯৯২ সালের পর প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকার শিরোপা জয় করেছে দেশটি। কিংবদন্তি লিওনেল মেসির নেতৃত্বে শিরোপা ঘরে তুলেছে দিয়েগো ম্যারাডোনার উত্তরসূরীরা।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের এই মারাকানায় ২০১৪ সালে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিলো মেসিদের। সেদিনের চিত্রটা যেন আজও চোখে ভাসে তার।
ম্যাচশেষে গণমাধ্যমে মেসি বলেন, এটা অন্যরকম আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি জানতাম একটা পর্যায়ে এটি ঘটবে। আমাদের লক্ষ্যটা ছিল পরিষ্কার এবং আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য ছিলো। এই আনন্দটা তীব্র। অনেকবার এমন আনন্দের স্বপ্ন দেখেছি।একটা ট্রফির জন্য লিওনেল মেসি কতোটা উন্মুখ হয়ে ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল কোপার ফাইনাল ম্যাচে। আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি জানিয়েছেন, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়েই পুরো নব্বই মিনিট খেলে গেছেন মেসি।সেমিফাইনালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন মেসি। দেশটির একজন ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকলে হ্যামস্ট্রিংয়ে আঘাত পান আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। তবে কিছুক্ষণ পরই উঠে দাঁড়ান তিনি। এসময় রক্ত ঝরতেও দেখা যায় তার পা থেকে। তারপরও খেলে যান পুরো ম্যাচ।ম্যারাডোনাও যেন আলোকবর্ষ দূর থেকে সাক্ষী থেকে ছিলেন সেই ভালোবাসার। তিনিও যেন চেয়েছিলেন এবারের কোপা আসুক তার দেশেই। রোববার সকালে কোপা আমেরিকা ফাইনালে চির প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়েলিওনেল মেসি হাতে ট্রফিটা নিয়ে এক বার আকাশের দিকে তাকালেন। যেন ম্যারাডোনার উদ্দেশে বললেন, ‘পেরেছি।’ হ্যাঁ পেরেছেন তিনি। পেরেছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপসহ বহু সাফল্যের অধিকারী ম্যারাডোনা কখনও কোপা আমেরিকা জিততে পারেননি। বিশ্ব জয় করলেও ল্যাটিন আমেরিকা আর জয় করা হয়ে ওঠেনি। সেই ট্রফি ছুঁলেন লিওনেল মেসি।
ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর ৪ জুন প্রথম মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের সেই ম্যাচে মেসিদের জার্সিতে ছিল ম্যারাডোনার ছবি। ঠিক বুকের মাঝখানে ম্যারাডোনা, নীচে লেখা ‘১৯৬০ থেকে চির দিন।’
সত্যিই চির দিন থাকবেন ম্যারাডোনা। রোববার কোপা আমেরিকার টুইটারে একটা ছবি দেখা গেল। ট্রফি হাতে মেসি আর যেন ওপর থেকে তার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন ম্যারাডোনা। টুইটে লেখা, ‘সব সময় তোমায় উৎসাহ দিয়ে যাব।’
এমনই তো ছিলেন ম্যারাডোনা। খেলা ছাড়ার পরেও দেশের জন্য গলা ফাটিয়েছেন। সব সময় উৎসাহ দিতে দেখা গিয়েছে তাকে। মেসিদের ম্যাচে গ্যালারিতে থাকতেন তিনি। আজও হয়তো আছেন।