বিদ্যমান বৈশ্বিক ও দেশীয় পরিস্থিতি এবং ডলারের দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির কারণে শিল্প খাত ভয়াবহ সংকটের মুখে পড়েছে। শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়েছে লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প খাতে উৎপাদন কমছে। কর্মীদের বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন সক্ষমতা কমছে। কিছু ইউনিট চালু রাখতে গিয়ে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করায় খরচ আরও বেশি হচ্ছে। সব মিলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে একদিকে পণ্যের দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে কমেছে পণ্যের বিক্রি। নয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এ খাতে সংকট আরও বাড়ছে। আগামীতে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। এটি হবে শিল্প খাতের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’।
করোনার সময় পণ্যের উৎপাদন ও বিপণন বাধাগ্রস্ত হয়েছে। করোনার পর হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এর প্রভাব কাটতে না কাটতেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়।
এতে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম আরও বাড়তে শুরু করে। গত এপ্রিল থেকে দেশে ডলারের দাম বাড়তে থাকে হু হু করে। এর মধ্যে গত নভেম্বরে জ্বালানি তেলের দাম এক দফায় ২৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হয়েছে ৫২ শতাংশ। এসব কারণে শিল্প খাতে খরচ বেড়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, শিল্প খাতে এখন সংকট যেকোনো পর্যায়ে গেছে তা বলে বোঝানো যাবে না। যেভাবে খরচ বেড়েছে, সেভাবে পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। রপ্তানিমুখী শিল্পে সংকট আরও প্রকট। এখানে ইচ্ছে করলেই পণ্যের দাম বাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে শিল্প খাত নিয়ে সরকারকে বসা উচিত। অন্য খাতের সঙ্গে এ খাতের তুলনা করলে চলবে না।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম ও দেশের বাজারে ডলারের দাম বাড়ার ফলে আগে ১০০ ডলার দিয়ে যে কাঁচামাল আমদানি করা যেত তা করতে এখন লাগছে কমপক্ষে ১৫০ থেকে ১৬০ ডলার। এতেও খরচ বেড়েছে।
ডলার সাশ্রয় করতে সরকার জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। ফলে লোডশেডিং হচ্ছে। এতে ওই সময়ে শিল্প উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা কম। বাংলাদেশের গড় উৎপাদন সক্ষমতা ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে ৫৫ শতাংশ। লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে উৎপাদন সক্ষমতা কমেছে। অন্যদিকে কিছু ইউনিট চালু রাখতে নিজস্ব জেনারেটরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে খরচ আরও বেশি বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে।