বিবাহিত জীবনের মানে কেবল দুজন মানুষের একসঙ্গে বসবাস আর যৌন মিলন নয়; দুটি পরিবার এবং সামাজিক সম্পর্কও বটে। বিবাহিত জীবন পারফেক্ট কিসে হয়? এ মোক্ষম প্রশ্নের জবাব দুনিয়ার কেউ দিতে পারবে না। তাই সম্পর্ককে আজীবন বাঁচিয়ে রাখতে যেমন একে অপরের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়, তেমনি দাম্পত্য জীবনে কিছু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়।
যে কারণে মনোবিদ অমিতাভ মুখার্জী বলেছেন, ‘সংসার জীবন অনেকটা ক্রিকেট ম্যাচের মতো। কোন বল ছাড়ব, আর কোন বল মারব, সেটা জানতে হয়। হিসেব গুলিয়ে গেলেই শুরু হবে অশান্তি। তাই সঙ্গীর কাছে সৎ থাকতে হবে। এরপরেও কথা থেকে যায়। সংসারে অশান্তি এড়াতে সঙ্গী অথবা সঙ্গীনীকে কী কী বলা উচিত হবে না, সেটা জানাও খুব জরুরি।’
এবার জেনে নিন কোন বল মারবেন আর কোনটা ছাড়বেন:
► দাম্পত্যে ঝগড়া-অশান্তি হতেই পারে। তবে ঝগড়া বা অশান্তির সময় মাথা গরম করে এমন কিছু আমরা বলে ফেলি, যা গড়ায় বহু দূর। হয়তো আজীবন তৈরি হয়ে যায় কিছু ক্ষত। সে সব বিষয় হয়তো কখনো মুছে ফেলা যায় না। পুনরায় ঝগড়ার সময় উঠে আসে। তাই ঝগড়ার সময় ওইসব বিষয় তুলবেন না।
► অনেক সম্পর্কের শুরুই খুব মসৃণ হয় না। হয়তো তখনই বিয়েটা করতে প্রস্তুত ছিলেন না আপনি। বাড়ির জোরাজুরিতেই বিয়েটা সারতে হয়েছিল। কিংবা অন্য কোনো সমস্যা ছিল। তবু এসব কথা সঙ্গীকে না বলাই ভালো। বিয়ে করে ফেলার পর এসব বললে তিনি অপমানিত হতে পারেন। যার সঙ্গে আজীবন সুখে থাকাতে চান, তাকে ছোট করা বা অমর্যাদা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
► সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কথায় কথায় ‘ভালোবাসি’ বলা বা প্রেমের বহিঃপ্রকাশ দিনে দিনে কমতে থাকে। কোনো বিষয়ে মতান্তরের সৃষ্টি হলে দ্রুত মিটিয়ে ফেলুন। একান্তই যদি বোঝেন যে এই সম্পর্ক আর টেনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তা হলে দুজনে বসে শালীন ভাবেই কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিন। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আনুষঙ্গিক নানা দিক বিবেচনা করুন।
► সারাদিনের শ্রম, অফিসের চাপ, বাদুড়ঝোলা হয়ে বাড়ি ফেরার পর সব রাগ গিয়ে পড়ে সঙ্গীর উপর? এই অভ্যাস দ্রুত বদলান। সঙ্গীও সারা দিনের চাপ, শ্রম এগুলো সামলেই বাড়িতে ফেরেন কিংবা ঘরের নানা কাজেও তাকে বিভিন্ন চাপ নিতে হয়। কাজেই এসব অজুহাতে সঙ্গীর সঙ্গে দুর্ব্যহার করা বাদ দিন।
► নতুন কোনো সম্পর্ক তৈরি হলে তা পুরনো সঙ্গীকে জানানোর সৎ সাহস বেশির ভাগেরই থাকে না। এই সাহস থাকলে সঙ্গীকে বুঝিয়ে বলুন ও সৎ ভাবেই প্রথম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসুন। কিন্তু সেটা করতে না পারলে নতুন সম্পর্ক ও পুরনো সম্পর্ককে একসঙ্গে কতটা সম্মান করে চলতে পারবেন সেটা বুঝেই এগিয়ে যান। কিন্তু কোনোভাবেই যেন আপনার সঙ্গী আপনার দুর্ব্যবহারের শিকার না হন।
► সিরিয়াস কোনো সম্পর্কে হয়তো জড়াননি; কিন্তু কারও প্রতি হালকা আকর্ষণ আছে। এমন ঘটনা বিরল কিছু নয়। তবে সেইসব ক্রাশ যদি সঙ্গী হালকা চালে নিতে না পারেন, ভুল বোঝাবুঝি বা সন্দেহ বাড়তে থাকার শঙ্কা থাকে, তাহলে সেই ফ্যান্টাসি বা ক্রাশের কথা না জানানোই ভালো। সবচেয়ে ভালো অন্যের প্রতি আকর্ষণ বাদ দিন।
► সঙ্গীর কোনো কাজের সঙ্গে আপনার সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকা কিংবা স্বামী/স্ত্রীর তুলনা টানবেন না। কোনো প্রসঙ্গে সাবেক সঙ্গীর প্রশংসা বা তিনি আপনাকে বর্তমান সঙ্গীর তুলনায় বেশি ভালো বুঝতেন- এসব আপত্তিজনক কথাবার্তা ও বিতর্কের বিষয় এড়িয়ে চলুন।
► সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকা কিংবা স্বামী/স্ত্রীর সঙ্গে আপনার কোনো শারীরিক সম্পর্ক ঘটে থাকলে স্বচ্ছ থাকার জন্য বর্তমান সঙ্গীকে জানাবেন কিনা সেটা আপনাদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে কখনোই সেই সম্পর্ক নিয়ে মাতামাতি করবেন না। পূর্বের শারীরিক বা মানসিক সম্পর্ক নিয়ে খুব বেশি আলোচনাও অনুচিত। এসব আপনার বর্তমান সঙ্গীকে কষ্ট দেবে।
► খুব ছোট ছোট বিষয়ে সঙ্গীর সমালোচনা করবেন না। কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। তাই সঙ্গী সব কিছুতে পারফেক্ট হবেন এমন ধরে নেওয়া বোকামি। কারণ আপনি নিজেও পারফেক্ট নন।
► ঝগড়া বা অশান্তির সময় কথায় কথায় ছেড়ে চলে যাওয়া বা বিচ্ছেদের কথা কখনও বলবেন না। যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা খুব অপমানজনক। সঙ্গীকেও চলে যেতে বলা বা সম্পর্ক থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা সরাসরি বললে তিনি অপমানিত হবেন। কাজেই এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। অন্যকে কষ্ট দেওয়া অধিকার আপনার নেই।
► সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, দাম্পত্য জীবনে মাঝেমধ্যে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা ঘটা উচিত ছিল না। পরিস্থিতির কারণে হয়তো ঘটে গেছে কিংবা এমনও হতে পারে যে, দুজনের কোনো একজন এর জন্য দায়ী। আপনারা যেহেতু আজীবন একসঙ্গে থাকতে চাইছেন, তাই এসব ঘটনার কথা ভবিষ্যতে ঝগড়ার সময় কখনই উঠিয়ে আনবেন না। এতে আপনার সঙ্গী অশান্তিতে ভুগবে। সে অশান্তিতে ভুগলে আপনি কি শান্তিতে থাকতে পারবেন?
KalerKontho