১৯৯৬ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামি লিগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করতে ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর সংসদে ইনডেমিনিটি আইন বাতিল করা হয়৷ ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর আবাসিক একান্ত সহকারি (পিএ) মোহিতুল ইসলাম ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেন৷ ৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হলে তারা মামলার তদন্ত শুরু করে। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারী সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে৷ ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজি গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন৷ তবে, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে থেমে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার।

২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামি লিগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠনের পর গতি ফেরে মামলায়। উচ্চ আদালতে ২৯ দিন শুনানির পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর  ঘোষণা হয় সেই ঐতিহাসিক রায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ হাইকোর্টের দেওয়া রায়, পঁচাত্তরের ১৫ অগস্ট সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন আহমদ, বজলুল হুদা এবং ল্যান্সার এ কে এম মহিউদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

অন্য দিকে বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ৬ জন এখনও বিদেশে পলাতক। বিভিন্ন সূত্রের তথ্য, যুক্তরাষ্ট্রে আছেন রাশেদ চৌধুরী এবং রিসালদার মোসলেমউদ্দিন। নূর চৌধুরী আছেন কানাডায়। অন্য ঘাতক খন্দকার আব্দুর রশিদ লিবিয়া অথবা কেনিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান এবং আব্দুল মাজেদ ভারতে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের গ্রেফতারে রেড অ্যালার্ট এখনও বহাল। খুনীদের অবস্থান নিশ্চিত করে দ্রুত তাদের দেশে আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল শতভাগ রাজনৈতিক চেতনার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধের যে শপথ ছিল, সেই শপথের পথ থেকে মাঝে অনেকটাই বেপথু হয়েছিল বাংলাদেশ। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা লড়ছেন মুক্তিযুদ্ধের পথে দেশটি আনতে, আর সে কারণেই ২০০৪-এর ২১ অগস্ট-সহ ২৩ বারের বেশি তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন আর শপথ নিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছেন,  তাঁর কন্যা এখন বাবার সেই স্বপ্নের পথেই ধাবমান করছেন ২০১৯ এর বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার নিজস্ব পরিচয়ে বিশ্বসভায় উজ্জ্বল। দেশটির সব ঔজ্জ্বল্য আর সাহসের ভিত্তি একটিই নামের উচ্চারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

AnandaBazar