কঠোর হুশিয়ারির পরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না পুলিশের অপরাধ প্রবণতা। দিন দিন তা কেবল বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে সারাদেশে ১৩ হাজার ৬শ’ পুলিশের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ জমা পড়ে পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলে। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার ১শ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ বেশিরভাগই কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে। এএসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত হয়। গত বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফে ১৭ লাখ টাকাসহ ডিবি পুলিশের ৭ জন সদস্য গ্রেফতার হয়। ফরিদপুর জেলা পুলিশ সুপার সুভাষ সিংহ রায়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ৮ কোটি টাকা অর্জন করার অভিযোগের পর পুলিশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা-১৯৮৫ অনুযায়ী অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া সদর দফতর পুলিশের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসূত্র, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতর অভিযুক্ত সদস্যদের গুরুদণ্ড না দিয়ে লঘুদণ্ড দেয়। ফৌজদারি মামলার অপরাধ করলেও বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দিয়েই ইতি টানা হয়। অনেক সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলে সময় নিয়ে কৌশলী তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করা হয়।
পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেলের একটি সূত্র জানায়, বিগত ৫ বছরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৭২১টি ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। এই মামলাগুলোতে ৭৯৮ জন পুলিশ সদস্য আসামি। এদের মধ্যে ২০১৬ সালে পুলিশের বিরুদ্ধে ১২৮টি মামলা দায়ের হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতরের সিকিউরিটি সেল ছাড়াও জেলা পর্যায়ের পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও প্রতি মাসে শত শত অভিযোগ জমা পড়ছে। এসব অভিযোগ তদন্তে কমিটিও হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ তদন্তের রিপোর্টই আলোর মুখ দেখছে না। অন্যদিকে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে মামলাসহ নানা হয়রানির মুখে পড়ছেন অনেকেই।
মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নুরজাহান খাতুন বলেন, পুলিশ যে কোন বিষয়ে গোপন রাখতে পারে বলে, তাদের দ্বারা সংঘটিত অনেক অপরাধমূলক কার্যক্রম বাইরে প্রকাশ পায় না। অপরাধী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, একজন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগের দায়ভার গোটা পুলিশ বাহিনী নেবে না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।