সব ধরনের মোটরযানে ডিজিটাল নম্বর প্লেট স্থাপন বাধ্যতামূলক। এরই মধ্যে অধিকাংশ যানবাহন ডিজিটাল নম্বর প্লেটের আওতায় এসেছে। নতুন করে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে ডিজিটাল নম্বর প্লেটের জন্য ফি আদায় করে বিআরটিএ। এরপর নষ্ট বা অকেজো হলে সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে ডিজিটাল নম্বর প্লেট প্রতিস্থাপন করতে পারেন গ্রাহকরা। কিন্তু এবার বলা হচ্ছে- নম্বর প্লেট নষ্ট হোক আর না হোক প্রতি ৫ বছর পর আবার ফি দিতে হবে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব বিআরটিএর কাছে পাঠিয়েছে নম্বর প্লেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বা ভেণ্ডার।
বিআরটিএর একাধিক মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা জানান, নম্বর প্লেটের মান নিয়ে শুরু থেকেই অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। বিশেষ করে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। এ জন্য আবার ফি গুণতে হচ্ছে গাড়ি মালিককে। কিন্তু এখন অকেজো না হলেও ফি আদায়ের প্রস্তাব বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে করা হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার চেয়ে বড় কথা- বিআরটিএর সঙ্গে সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানের চুক্তিতেও এ ধরনের টাকা আদায়ের সুযোগ নেই।
তা ছাড়া ডিজিটাল নম্বর প্লেট চালুর বড় কারণ ছিল এ ডিজিটাল নম্বর প্লেটের মাধ্যমে গাড়িটির অবস্থান তাৎক্ষণিক জানা যাবে। ফলে খোয়া বা চুরি হওয়া গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করে তা উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় সুফল পেতেও বেগ পেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, মোটরযানের রেট্রো-রিফ্লেকটিভ নম্বর প্লেট, আরএফআইডি ট্যাগ ও স্মার্টকার্ড ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংগ্রহের জন্য ২০১৫ সালের ৩১ মে ১৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করে বিআরটিএ। ৫ বছর পর এর নবায়নের কথা। আবার নেগোসিয়েশন অনুযায়ী পরবর্তী ৫ বছরের জন্য ৬ ধরনের মোট ২২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৮৮টি নম্বর প্লেট সরবরাহের কথা রয়েছে। ভেণ্ডারের পক্ষ থেকে নতুন করে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বিআরটিএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় বলা হয় নম্বর প্লেটের মেয়াদ ৫ বছর। ওই সময় পার হওয়ার পর নম্বর প্লেট ও ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বাবদ আবার অর্থ আদায় করবে বিআরটিএ।
এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এখন বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা হয়। কারণ এর আগে প্রস্তাবটি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। তাই কোন বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছিল সেই দোহাই দিয়ে নতুন করে ফি আদায়ের সুযোগ নেই। নম্বর প্লেট নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর মান আরো বাড়ানো উচিত। অনেক গ্রাহক বলছেন, নম্বর প্লেট বাবদ বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন বাহন থেকে আদায় করা হচ্ছে ৪ হাজার ৬২৮ টাকা। আর মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ২ হাজার ২৬০ টাকা। এরপর প্রতিস্থাপনের জন্য সমহারে ফি নেয়া হচ্ছে। এই বাস্তবতায় ৫ বছর পর নতুন করে নম্বর প্লেটের জন্য টাকা আদায়ের প্রস্তাব চুক্তির লঙ্ঘন। এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান বলেন, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি ছিলো সেই মতেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুক্তির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
বিআরটিএ সূত্র জানিয়েছে, নম্বর প্লেটের জন্য ৬শ’ কোটি টাকার স্কিম প্রকল্প ২০১২ সালে হাতে নেয় বিআরটিএ। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়। তখন ফলাও করে প্রচার করা হয়, আরএফআইডি ট্যাগ লাগানো কোনো গাড়ি যখন আরএফআইডি স্টেশন অতিক্রম করবে, তখন কম্পিউটার সার্ভারে গাড়িটির সার্বিক তথ্য দেখাবে। যেমন- কর, গাড়ির ফিটনেস, রুট পারমিট ইত্যাদি। কেন্দ্রীয়ভাবে ডেটাবেসে গাড়ির মালিকের নাম, গাড়ির রংসহ বিস্তারিত তথ্য জমা থাকবে। এর মাধ্যমে রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে এসএমএসে জানানো হবে হালনাগাদ করার তথ্য। এ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ কক্ষে বসেই গাড়িটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাবে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে ট্রাফিক পুলিশের কাছে থাকা বিশেষ মুঠোফোনের মাধ্যমে এ কাজ করা হবে। ফলে খোয়া যাওয়া গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করে তা উদ্ধার করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গাড়িতে নম্বর প্লেট সংযোজন হয়েছে ঠিকই কিন্তু চুরি ঠেকানো যাচ্ছে কম। অভিযোগ করেও সুফল পেতে সময় পার হয়ে যায়। কারণ রাজধানীর ১২টি এলাকায় ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ওই এলাকা দিয়ে গাড়ি অতিক্রম করলে তা জানা যায়। কিন্তু গাড়িটি হারানোর পর থানায় জিডি করে বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করতে হয়। লিখিত আবেদনের পর এর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এসব করতে করতে পার হয়ে যায় অনেক সময়। ততক্ষণে গাড়ি চলে যায় ঢাকার বাইরে, সেখানে তাদের ক্যামেরা নেই। আর বন্ধের দিনে বা অফিস সময় ব্যতিরেকে গাড়িটি খোয়া গেলে আরো বেশি বেগ পেতে হয় ভুক্তভোগীকে।
অন্যদিকে ডিজিটাল নম্বর প্লেট সংযোজনের কারণে গাড়ির ফিটনেস ও ট্যাক্স টোকেনের জন্য আলাদাভাবে গাড়ি থামিয়ে পরখ করতে হবে না ট্রাফিক পুলিশকে এমন ঘোষণা ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। ফলে গাড়ির উইন্ডশিল্ডে আলাদা করে ডিকাল (স্টিকার) লাগাতে হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আরএফআইডি ট্যাগ সংযোজনের পরও এই স্টিকার লাগানো হচ্ছে বা লাগাতে হচ্ছে।