বাজারে চালের দাম আকাশ ছোঁয়ার উপক্রম হয়েছে। কেজি প্রতি মিনিকেট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সব ধরণের মোটাচাল এখন কেজি ৫০ টাকার ওপরে। চালের এ অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য মিল মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ি করছেন সরকারের মন্ত্রীরা। অভিযোগ করা হয়েছে, মিলমালিকরা অবৈধভাবে চালের মজুদ করে রাখছেন। আর এতেই বাজারে বেড়ে গেছে চালের দাম।
ফলে অবৈধভাবে চাল মজুদকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেছেন, প্রতিটি জেলা প্রশাসক ও পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেন অবৈধভাবে চাল মজুদকারীদের প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হয়।
আজ রোববার সচিবালয়ে অটোমিল মালিক অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রীর এ ধরণের নির্দেশের প্রেক্ষাপটে আজ বিকেলে কুষ্টিয়া রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশীদের গুদামে অভিযান চালায় টাস্কফোর্স।
বাণিজ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আবদুর রশীদ ও মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীকে গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, অবৈধভাবে মজুদকারীদের জন্য চালের দাম বাড়ছে। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালের অবৈধ মজুদ পেলেই মালিককে গ্রেফতার করতে হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে চাল সংকট কাটাতে দেশের কোথায় এবং কোন গুদামে চাল মজুদ আছে সে বিষয়টি জানতে চান বাণিজ্যমন্ত্রী। একপর্যায়ে বাংলাদেশ রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলীর নাম উঠে আসে। তাদের মধ্যে আব্দুর রশিদের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। কুষ্টিয়া ও নওগাঁয় তার চালের মিল ও গুদাম আছে। সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার গুদামে অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত চাল মজুদের প্রমাণ পায়। এসময় তাকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে বাণিজ্যমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে কুষ্টিয়ার এডিসি ও নওগাঁর ডিসি এবং দুই জেলার এসপির সাথে ফোনে কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তাদের বলেন, ‘রশিদের মতো লোকরে কোন আইনে মাত্র ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তিনি অতিরিক্ত চাল মজুদ করে যে অপরাধ করেছেন তাতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করা উচিত ছিল। এ মুহূর্তে আবারও তার গুদামে অভিযান চালান। সেখানে মজুদ করা অতিরিক্ত চাল ও ধান জব্দ করে তাকে গ্রেফতার করুন।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একইভাবে আমি সব জেলার ডিসিদের সাথে ফোনে কথা বলব। যেখানে চালের গুদাম আছে সেখানে অভিযান চালানো হবে। অতিরিক্ত মজুদ রাখলে মিল মালিকদের তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা হবে। কারণ তারা সিন্ডিকেট করে বাজারে চাল সংকটের গুজব ছড়িয়েছে। তারাই সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্র করছে।’
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তারা ষড়যন্ত্র করছেন।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, আগামী মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সব মিল মালিক অ্যাসোসিয়েশন, আমদানিকারক অ্যাসোসিয়েশন, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সাথে তিন মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যদি প্রমাণ হয় আব্দুর রশিদ ও লায়েক আলীর অ্যাসোসিয়েশন চাল সংকটের জন্য দায়ী, তবে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।