সরকারের হস্তক্ষেপের পর চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীদের আশ্বাসের একদিনের ব্যবধানে মিলগেট ও পাইকারিতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা দাম কমেছে। তবে খুচরা বাজারে এখনও দাম কমার প্রভাব পড়েনি। অবশ্য দু-একদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও চালের দাম কমতে শুরু করবে বলে মনে করছেন বাজার-সংশ্লিষ্টরা।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের নজরদারি বাড়িয়েছে সরকার। মজুদদারের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও ওএমএসের চাল খোলাবাজারে বিক্রির ফলে বাজারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গুদামে প্রশাসনের তদারকিতে বাজারে চাল সরবরাহ বেড়েছে। আবার আমদানিকারক ও মিল মালিকরা দাম কমিয়ে বিক্রি শুরু করেছেন। এর ফলে পাইকারিতেও কমেছে চালের দাম।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে চালের দাম কমানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। বৈঠকে তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ পর্যায়ে পাটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
বুধবার বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলেন, ‘শুধু চাল আমদানি পর্যায়ে তিন মাস প্লাস্টিকের বস্তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ানবাজার, কৃষি মার্কেটসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে মোটা চালের দাম। একদিন আগে যে চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেটা এখন ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে প্রায় ৪ টাকা পর্যন্ত দাম কমেছে। তবে মাঝারি ও সরু চালের দাম কমছে কম। পাইকারি বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমেছে।
বুধবার প্রতি কেজি মাঝারি মানের বিআর-২৮ চাল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা এবং সরু চালের মধ্যে মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬১ টাকা ও নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। একদিন আগেও বিআর-২৮ চালের কেজি ৫৬ থেকে ৫৭ টাকা, মিনিকেট ৬১ থেকে ৬৪ টাকা ও নাজিরশাইল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা ছিল। আমদানিকারকরা দাম কমিয়ে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি করছেন; যা আগে ৪৬ থেকে ৪৭ টাকা ছিল।
বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘দেশি ও আমদানি করা মোটা চাল আজই (বুধবার) দর কমিয়ে প্রতি টন বিক্রি করছেন ২ হাজার ২৫০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায়। যা গত এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।’ এ হিসাবে কেজিপ্রতি দাম কমেছে প্রায় ৪ টাকা।
এ বাজারের তাসলিমা রাইস এজেন্সির পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আবদুর রহিম সমকালকে বলেন, ‘চালের বাজার পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও দু’চারদিন সময় লাগবে। তবে দাম কমতে শুরু করায় পাইকারিতে ক্রেতা কমেছে। ফলে দাম আরও কমবে।’
কারওয়ানবাজারের ইসমাইল অ্যান্ড সন্সের চাল ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এখন মিলাররা কম দামে অর্ডার নিচ্ছেন। তবে কিছু মিলার এখনও দাম কমিয়ে অর্ডার নিচ্ছেন না। নতুন দরের চাল বাজারে এলে দাম আরও কমে যাবে।’
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ফুডের স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ সমকালকে বলেন, ‘আমদানি করা চালের দাম কমে গেছে। আমদানি চালের সরবরাহ বাড়লে স্থানীয় বাজারে সব চালের দাম কমে যায়। আমদানি চালের ওপর বাজার নির্ভর করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিল মালিকরা দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন। বুধবার থেকে তার মিলে প্রতি বস্তা মিনিকেট ২ হাজার ৯৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। এর আগে তিনি প্রতি বস্তা ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করেন। এ হিসেবে তার মিলে মিনিকেটের কেজিপ্রতি দাম কমেছে ৩ টাকা। মোটা চালও একই হারে কমিয়ে ২ হাজার ১৫০ টাকা বস্তা বিক্রি করছেন।’
এদিকে, খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারিতে দাম কমলেও আগে বেশি দামে কেনা চাল শেষ হয়নি। এ চাল বিক্রি শেষ হলে তখন খুচরায় চালের দাম কমে যাবে। এখন আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় মোটা চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৮ থেকে ৫৯ টাকা, মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৭০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, লাগামহীন বাড়তে থাকা চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত রোববার প্রশাসনকে মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।