ঢাকার প্রথম সুবাদার ইসলাম খাঁ খনন করেছিলেন ধোলাইখাল। তখন খালটি ঢাকা শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছিল। আর এটি হয়ে উঠেছিল ঢাকার প্রধান জলপথ ও নগর রক্ষার পরিখা। তারপর তা পরিণত হয়েছিল ঢাকার আবর্জনা নিঃসারক হিসেবে। খালটির একটি অংশ মিলিত হয়েছিল ডেমরার কাছে শীতলক্ষ্যা নদীতে, আরেক অংশ বুড়িগঙ্গায়।
ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের লেখা ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইতে নলিনীকান্ত ভট্টশালীর একটি উদ্ধৃতিতে পুরান ঢাকার ধোলাইখালকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে বহু আগেই বিলীন হয়ে গেছে ধোলাইখালের অস্তিত্ব। পরে এই খাল ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা; নাম ধোলাইখাল সড়ক। এখন সেই রাস্তায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ট্রাক-পিকআপ স্ট্যান্ড।
ধোলাইখাল সড়কটি (দক্ষিণ অংশ) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। গত বুধবার ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা ধোলাইখাল সড়কের এই অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ডকে ওয়ার্ডের অন্যতম প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁরা বলেন, ট্রাকস্ট্যান্ডের কারণে সড়কে দিনভর লেগে থাকে তীব্র যানজট। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আশপাশের গলিগুলোতে।
কুঞ্জ বাবু রোড, গোবিন্দ দত্ত লেন, রঘুনাথ দাস লেন, রোকনপুর লেন, পাঁচ ভাই ঘাট লেন, নাসির উদ্দিন সরদার লেন, কার্কুনবাড়ী লেন, জনসন রোড, কাজী আবদুর রউফ রোড, নন্দলাল দত্ত লেন, নবদ্বীপ বসাক লেন, রাজচন্দ্র মুন্সী লেন, সুভাষ বোস অ্যাভিনিউ (লক্ষ্মীবাজার), হাজী মজিদ লেন এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৪২ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত।
ধোলাইখাল সড়কে ট্রাকস্ট্যান্ড: মুনতাসীর মামুনের লেখা বইতে বলা হয়, মোগল আমলে শহরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছিল এই খাল। তাই মোগলরা নিশ্চয়ই যত্নের সঙ্গে এর রক্ষণাবেক্ষণ করত।
কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। গতকাল দেখা যায়, বানিয়ানগর পঞ্চায়েত কমিটি ফটক এলাকা থেকে ধোলাইখালের টং মার্কেট পর্যন্ত সড়কের দক্ষিণ পাশে সড়কের অর্ধেকের বেশি দখল করে রাখা আছে প্রায় ৪০টি ট্রাক ও পিকআপ। এতে বেগমগঞ্জ থেকে ধোলাইখালের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। আশপাশের গলি থেকেও রিকশা বা অন্যান্য যান ঢুকতে ও বের হতে সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যে সড়কের দক্ষিণ পাশের ফুটপাতে প্রায় ২০টি অবৈধ দোকান গড়ে উঠেছে। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে ট্রাক-পিকআপের ভাঙা ও পুরোনো সরঞ্জাম। এতে ফুটপাত দিয়েও চলাচলের কোনো উপায় নেই।
এ ছাড়া ধোলাইখাল মূল ট্রাকস্ট্যান্ডের ভেতরে প্রায় ২০০ ট্রাক ও পিকআপ রাখা হয়েছে। ধোলাইখাল ট্রাকস্ট্যান্ডে আছে ঢাকা ট্রাক মিনি ট্রাক ট্যাংকলরি ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি, ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়। কিন্তু কার্যালয়গুলোতে কাউকে দেখা যায়নি।
রোকনপুরের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, সড়কে ট্রাক ও পিকআপ রাখায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ধোলাইখাল ও ইংলিশ রোডে লেগে থাকে যানজট।
ধোলাইখাল সড়ক ও ফুটপাত দখল করে মালামাল রেখেছেন ভাঙারি ব্যবসায়ীরা l প্রথম আলোবাহাদুর শাহ পার্ক ঘেঁষে ডাস্টবিন: বাহাদুর শাহ পার্ক পুরান ঢাকার ওই অংশের মানুষের মুক্ত নিশ্বাস নেওয়ার একমাত্র স্থান। পার্কের উত্তর পাশ ঘেঁষে একটি বড় ডাস্টবিন। এতে আবর্জনার দুর্গন্ধ পার্কসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল দেখা যায়, পার্কের উত্তর পাশে জনসন সড়কে ভ্যান থেকে ময়লা-আবর্জনা সড়কে নামিয়ে সেগুলো ঘেঁটে প্লাস্টিকের বিভিন্ন ভাঙাচোরা জিনিসপত্র সংগ্রহ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। আবর্জনার পানি গড়িয়ে পড়ছে পয়োনিষ্কাশনের ড্রেনে।
স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঘাঁটাঘাঁটির কারণে ময়লার দুর্গন্ধ কয়েক গুণ বেশি ছড়ায়।
গ্যাস-সংকট: স্থানীয় লোকজন বলেন, কাজী আবদুর রউফ রোড, পাঁচ ভাই ঘাট লেন, রোকনপুরসহ আশপাশের এলাকায় গ্যাস-সংকট আছে।
কাজী আবদুর রউফ রোডের বাসিন্দা ওবায়দুল্লাহ বলেন, সকাল আটটার পরপরই গ্যাসের লাইনে চাপ কমতে থাকে। নয়টার পর আর থাকে না। বিকেল চারটার দিকে আবার গ্যাস আসে। কিন্তু দু-তিন ঘণ্টার পর আবার চলে যায়। এই অবস্থার মধ্যে বাস করছেন এলাকার বাসিন্দারা।
পানি থেকে দুর্গন্ধ: ওয়ার্ডের প্রায় সব বাসাবাড়িতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে। কলতাবাজারের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেন, প্রায়ই ওয়াসার লাইনের পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে।
স্মার্ট নিউজ টোয়েন্টিফোর