দেশে চলমান উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন -প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । তিনি বলেন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নের গতিটা অব্যাহত রাখা জরুরি। আর এটা মাথায় রেখেই ডিসিদের কাজ করে যেতে হবে। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সরকারি সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ডিসিদের সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি।
আজ রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে একথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘যে দেশ থেকে আমরা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছিলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, তারা (পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী) এক সময় বলেছিল বাংলাদেশের মানুষ গরিব, এত লো, ওটা একটা বোঝা ছিল, চলে গেছে (স্বাধীন হয়ে যাওয়া) ভালো হয়েছে। অথচ আজকে তারা বলতে বাধ্য হয়, হামকো বাংলাদেশ বানা দো। এটা আজকে তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে। আমাকে বাংলাদেশের মতো উন্নত করে দাও, সেটা তারা বলতে বাধ্য হচ্ছে।বাংলাদেশ সবদিক থেকে উন্নয়নে এমন নজির স্থাপন করেছে যে, বাঙালি জাতিকে শোষণ করা পাকিস্তানিরাও এখন বলতে বাধ্য হচ্ছে ‘হামকো বাংলাদেশ বানা দো’।
যারা স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সময় কটূক্তি করেছে তাদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে তারা বাংলাদেশকে অবহেলার চোখে দেখে না। আজকে বাংলাদেশকে তাদের সম্মানের চোখেই দেখতে হয় যে, বাংলাদেশ পারে।আজকে উন্নয়নের যে গতি, সেটা যেন কখনো থেমে না যায়। স্বাধীন বাংলাদেশ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে, সে সম্মান ধরে রেখে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই।পণ্য বহুমুখীকরণ ও নতুন রফতানি বাজার খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন পণ্য, নতুন দেশ খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের বাজারটা যেন আরও সম্প্রসারিত হয়। সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।‘জাতির পিতা ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সে স্বপ্ন যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সবসময় ব্যবসায়ীদের পাশে আছি। আমরা ব্যবসা করি না। আমাদের সরকার ব্যবসা করতে আসেনি।’
দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হবে। যেন আমাদের দেশের বিভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে পারি। আবার বিদেশেও জনশক্তি রফতানি করতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ২০২টি দেশে প্রায় ৭৫০টি পণ্য ও সেবা রফতানি করে ৪৬ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। অথচ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল মাত্র ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য ও খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের জন্য ৬৬টি প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রফতানি ট্রফি প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে। এরমধ্যে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণ, ২১টি প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্য এবং ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ব্রোঞ্জ প্রদান করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
২০২১ সালে বাংলাদেশের রফতানি আয় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কথাও জানান তিনি।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা ইয়াসমিন।