আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে দশদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। দুটো দেশই পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও গোলা বর্ষণের অভিযোগ করছে।
বিরোধপূর্ণ অঞ্চল নাগোর্নো-কারাবাখের দখল নিয়ে ২৭শে সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই সংঘাত।
আর্মেনিয়ায় কর্তৃপক্ষ বলছে, নাগোর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টে বোমা হামলা চালানো হয়েছে। আবার আজারবাইজানও বলছে যে তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গাঞ্জাও আক্রমণের শিকার হয়েছে।
বিবিসির রুশ বিভাগের কয়েকজন সাংবাদিক নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি শহরে ঢুকে সেখানকার যুদ্ধ পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে সক্ষম হয়েছেন। এসময় তারা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এখানে তাদের দেওয়া বিবরণ তুলে ধরা হলো:
আমরা লাচিন শহরের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। এই শহরটি নাগোর্নো-কারাবাখ ও আর্মেনিয়ার সীমান্তের কাছে। সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে, সম্ভাব্য গোলাবর্ষণের ব্যাপারে লোকজনকে সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। গত তিনদিন ধরে আজারবাইজানের সামরিক বাহিনী এই শহরের ব্রিজটির ওপর হামলা চালাচ্ছে। এটি ধ্বংস করে দিয়ে তারা আর্মেনিয়া ও কারাবাখের মধ্যে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
আর্মেনিয়া থেকে কারাবাখে যাওয়ার জন্য আছে দুটো রাস্তা। উত্তরের রাস্তাটি গেছে লেক সেভানের তীর ধরে। এটি আজারবাইজানের নিয়ন্ত্রিত এলাকার খুব কাছে।
সংঘর্ষ শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকেই এই রাস্তাটি বিচ্ছিন্ন। এটিকে বলা হয় ‘লাচিন করিডোর’ যা নাগোর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্টকে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়েরাভানের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এটাই এই দুটো শহরের মধ্যে যাতায়াতের প্রধান রাস্তা।
রবিবার সকালে আমরা স্টেপানাকার্ট অভিমুখে যাত্রা শুরু করি। কিন্তু সন্ধ্যার মধ্যেই সেতুটি ব্যবহারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

যুদ্ধের কারণে বহু মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়েছেন।
রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যারা কাজ করেন তারা নদীর অগভীর অংশে কাঁকর, নুড়ি, পাথর ফেলে দেয়, যাতে এর ওপর দিয়ে আপাতত গাড়ি চলাচল করতে পারে।
গোলাবর্ষণ
গাড়ি নিয়ে আমরা যখন লাচিন শহরের কেন্দ্রের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হতে থাকি, তখনই নতুন করে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। বিমান হামলার ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য এতো জোরে সাইরেন বাজানো হয় যে কান ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা।
রাস্তা দিয়ে তখন একটি পুলিশের গাড়ি ছুটে যাচ্ছে, লাউডস্পিকারে কেউ একজন চিৎকার করে লোকজনকে বলছে যতো দ্রুত সম্ভব কোন শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেওয়ার জন্য।
বিবিসির এই দলটির জন্য সেসময় সবচেয়ে কাছের শেল্টারটি ছিল একটি সুপারমার্কেটের মাটির নিচের সেলার। এই মার্কেটের মালিক নেলি নামের একজন মহিলা, যিনি ১৭ বছর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে কাটিয়ে এখন তার নিজের বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন।

হোটেলের এই বেজমেন্ট শরণার্থীদের জন্য শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সেলারে দুটো কক্ষ। সেখানে রাখা হয়েছে টমেটোর বাক্স, চালের বস্তা, ব্র্যান্ডির বোতল এবং কয়েকটি কোদাল। আস্তে আস্তে সেলারটি লোকজনে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো। তাদের মধ্যে স্থানীয় লোকজন যেমন আছে তেমনি আছে আমাদের মতো কিছু লোকও যারা লাচিনের ভেতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে কোথাও যাচ্ছিল।
এসব লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ যুদ্ধ থেকে বাঁচতে স্টেপানাকার্ট থেকে পালিয়ে আসছিল। কিন্তু অন্যরা সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছিল।
সুপারমার্কেটের মালিক নেলি সবাইকে কফি ও কিছু খাবার দিলেন। সেলারে বসেই তিনি সেগুলো তৈরি করেছেন।
একজন শিল্পী ও এক যোদ্ধা
পাকা চুলের হালকা পাতলা এক ব্যক্তি তখন বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তার পরনে ওয়েস্টকোট এবং উলের কার্ডিগান। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমাদের মতোই একজন সাংবাদিক।
কিন্তু দেখা গেল তিনি আসলে একজন শিল্পী। তার নাম গ্রাচিক আর্মেনাকিয়ান। কারাবাখে প্রথম যখন যুদ্ধ হয় তখন তিনি একজন ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে তীব্র সংঘর্ষের শেষের দিকে তিনি বসবাস করতেন রাশিয়ার মস্কোতে।

এই শিল্পী মনে করেন যুদ্ধ করার জন্য সামরিক বাহিনী লোকজনকে ডেকে পাঠাবে তাদের কোন অভিজ্ঞতা না থাকার পরেও।
এখন তিনি ইয়েরাভানে থাকেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ করতে আসার আগে এবিষয়ে তিনি তার বন্ধু বা পরিবারের মতামতও নেননি।
“তারা আমাকে বলতো দেখ, এটা তোমার কাজ নয়! তুমি কেন যাবে? বাড়িতে থাকো। আমি প্রত্যেককে বলেছি যে আমাকে কারাবাখে যেতে হবে এবং আমি আজ সকালেই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি,” তিনি আমাদের বললেন।
আমরা তখন তার কাছে জানতে চাইলাম কেন তিনি নাগোর্নো-কারাবাখে যাচ্ছেন, তার পরিকল্পনা কী। তিনি তো আগে কখনো যুদ্ধ করেননি। তিনি কি সেখানে স্বেচ্ছায় যুদ্ধ করতে যাচ্ছেন?
তিনি জবাব দিলেন: “আমি মনে করি যে আমি গোলন্দাজ বাহিনীকে কিছু দিক-নির্দেশনা দিতে পারবো। আমরা শিল্পীরা জায়গা ও দূরত্ব সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখি।”

এই সড়কটি আর্মেনিয়া থেকে গেছে নাগোর্নো-কারাবাখে।
গ্রাচিকের কোন সামরিক দক্ষতা নেই। তবে তিনি আশা করছেন যুদ্ধে গেলে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও তিনি মনে করেন যে যুদ্ধে যেকোন ধরনের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হতে পারে নৈতিক, শারীরিক এমনকি তার ভাষায়, “বুদ্ধি দিয়ে সাহায্য করাও।”
কারাবাখে ফেরা
নাগোর্নো-কারাবাখে গিয়ে তার এই যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত পাগলামি মনে হলেও আমরা এরকম বহু আর্মেনীয়কে দেখেছি যারা সারা বিশ্ব থেকে মস্কো হয়ে কারাবাখে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
কদিন আগেও ইয়েরাভান-মস্কো রুটে ছোট ছোট প্লেন চলাচল করতো। কিন্তু এখন বোয়িং ৭৭৭, যেগুলোতে করে সাধারণত পর্যটকরা আকর্ষণীয় জায়গা বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক কিম্বা থাইল্যান্ডে যান, সেরকম বড় বড় বিমানে করে আর্মেনীয়রা মস্কো থেকে কারাবাখে ফিরে যাচ্ছে।

লাচিন
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পর্যটকদের এসব রুটে পরিবর্তন ঘটেছে। এখন যুদ্ধের কারণে সেসব আরো বেশি বদলে গেছে।
এখন ৫০ ও ৬০ বছর বয়সী বহু পুরুষকে নাগোর্নো-কারাবাখগামী বিমানে উঠতে দেখা যাচ্ছে।
তাদের অনেকে এর আগেও এভাবে সেখানে ফিরে গেছেন- ৩০, ২০, এমনকী চার বছর আগেও।
সতর্কতা
লাচিন শহরের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের একজন প্রতিনিধি গেভোর্গ এমনাতসাকান বলছেন কারাবাখের ভবিষ্যতের জন্য এই শহরটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ শহর নয়। “সব শহরই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন তিনি।
তিনি জানিয়েছেন যে এখনও পর্যন্ত এই লাচিন শহরে বড় ধরনের গোলাবর্ষণ বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

গেভোর্গ এমনাতসাকান
আমাদের মধ্যে কথাবার্তায় প্রায়ই হস্তক্ষেপ করছিল সামরিক পোশাক পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি। যুদ্ধের শুরুতে সেনাবাহিনী চাইছিল সেখানে সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকুক, কিন্তু এখন তারা এবিষয়ে অনেক বেশি সাবধানতা অবলম্বন করছে।
তারা কোন ধরনের সরাসরি স্ট্রিমিং বা সম্প্রচার চায় না। তাদের দুশ্চিন্তা হলো সেরকম কিছু করা হলে ঠিক কোন জায়গায় সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হচ্ছে সেটি প্রকাশিত হয়ে পড়বে।
তারা বললো যে শুধু সাদামাটা কিছু পেছনে রেখে আমরা ভিডিও করতে পারবো, কারণ তাহলে বোঝা যাবে না যে আমরা কোন জায়গায় আছি।
শরণার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী
এদিকে কখন গোলাবর্ষণ শেষ হয় তার জন্য অপেক্ষা করতে করতে সেলারে লোকজনের ভিড় বাড়তে লাগলো।
সেখানে সব ধরনের লোকজন ছিল: স্টেপানাকার্ট থেকে আসা সাংবাদিক, আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী কিছু গ্রাম থেকে আসা শরণার্থী, এবং আরো কিছু লোক যারা যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে যাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করার জন্য।
কয়েকজন নারী কাঁদছে, তারা বাড়ি ঘর হারিয়ে ফেলেছে। অন্যরা শান্ত হয়ে চুপচাপ বসে আছে। আলাপ আলোচনা করছে কখন আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে সেবিষয়ে।
সেলারের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে একদল লোক সিগারেট খাচ্ছিল। তারা এমন একটা ভান করছিল যে তারা মোটেও ভীত নয়। তারা বলছিল যদিও আমাদেরকে এখানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে কিন্তু আসলে যেখানে বোমা ফেলা হচ্ছে সে জায়গাটি এখান থেকে অনেক দূরে।
তাদের একথা বলা শেষ হতে না হতেই, খুব কাছে একটি বোমা বিস্ফোরিত হল। আর সকলের সঙ্গে তারাও তখন সেলারের ভেতরে লুকিয়ে পড়লো।

শুসা শহর থেকে দেখা রাজধানী স্টেপানাকার্ট
বার বার পালানো
স্টেপানাকার্ট থেকে গাড়ি চালিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট দূরে প্রাচীন শহর শুশা। নাগোর্নো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপানাকার্ট পাহাড়ি উপত্যকায় অবস্থিত কিন্তু শুশা শহরটি একটি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। এখানে এখনও তেমন একটা গোলাবর্ষণ করা হয়নি। কিন্তু হামলা চালানো হলে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কোন শেল্টার খুঁজে পাওয়া কঠিন।
শুশা শহরের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে বেশ কয়েকজন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। গত রবিবার সেখানে একটি গোলা আঘাত হেনেছে। নাগোর্নো-কারাবাখের স্বঘোষিত সরকার দাবি করেছে যে এই হামলায় সেদিন শুশা এবং স্টেপানাকার্টে কমপক্ষে চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
শুশা শহর থেকে রাজধানী স্টেপানাকার্ট খুব ভালোভাবেই দেখা যায়। আমরা এখানে কয়েক ঘণ্টা ধরে ভিডিও করি। যতক্ষণ আমরা সেখানে ছিলাম, সেখানে কোন গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু আমরা জানি যে স্টেপানাকার্টে প্রতিদিন সকালে ও রাতে বিরামহীন বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। আমাদের চারজন সাংবাদিক সহকর্মী যারা স্টেপানাকার্টে ছিলেন তারা বলছেন, প্রতিদিনই অবস্থার অবনতি ঘটছে।
শুশা শহরে যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই অনেক বৃদ্ধ, তারা আজারবাইজান সীমান্তের কাছের গ্রামগুলো থেকে এখানে এসেছেন।

গোলাবর্ষণ এড়াতে সেলারে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন শরণার্থী।
রায়া গেভরকিয়ান একজন রুশ শিক্ষক। তিনি বলেছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিনি একটি টেলিফোন কল পেয়েছেন এবং তখন তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছে।
“তারা চাচ্ছিল না বেসামরিক লোকজন যাতে কম মারা যায়। প্রায় ৫০ জনের মতো পালিয়ে এসেছে,” তিনি আমাদের বললেন।
তিনি জানান, ১৯৮৮ সালে তিনি আজারবাইজান ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরে ১৯৯২ এবং ২০১৬ সালেও তাকে সাময়িকভাবে নাগোর্নো-কারাবাখ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। এবার তিনি বাড়ি থেকে চতুর্থবারের মতো পালিয়ে এসেছেন। তার দুই ছেলে যুদ্ধের সামনের কাতারে এবং তিনি জানেন না যে তারা বেঁচে আছে কীনা, কারণ সন্তানদের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই।
সেখানে আরেকজন শরণার্থী ছিলেন আইদা মেলকানিয়ান। তিনিও তার প্রিয়জনদের নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
তিনি জানান তার ১৮ বছর বয়সী ছেলেকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং তার এক ভাই স্বেচ্ছায় যুদ্ধে যোগ দিয়েছে।
আইদা বলছেন কয়েকদিন আগে তিনি তার ভাই এর কাছে শুনেছেন যে সে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল এবং এখন সে পায়ে হেঁটে স্টেপানাকার্টে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ সেখানে যাওয়ার কোন গাড়ি নেই।
“আমার ভাই বলেছে সে আহত হয়নি। কিন্তু আমি তার কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারছিলাম যে তার কিছু একটা হয়েছে,” বললেন তিনি।
“পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। কিন্তু বিশ্ব এখনও নিরব। এখন একবিংশ শতাব্দী এবং শান্তিপূর্ণ লোকজনের ওপর বোমা হামলা চালানো হচ্ছে। এটা খুবই অমানবিক,” বলেন তিনি।

লাচিন শহরে লোকজন ভবনের বেজমেন্টে আশ্রয় নিচ্ছে।
“শুধু নিজেদের ওপর নির্ভর করতে পারি”
আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া কোন দেশই নাগোর্নো-কারাবাখকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে না। ইয়েরাভানে অস্বীকৃত এই এলাকাটির একজন প্রতিনিধি আছেন কিন্তু কোন দূতাবাস নেই।
নাগোর্নো-কারাবাখের প্রতিনিধি সের্গেই গাজারিয়ান বলেছেন ফ্রন্ট লাইনে আজারবাইজান আধিপত্য বজায় রেখেছে তবে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি।
আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্টেপানাকার্ট কি রাশিয়ার কাছ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে? কোন সামরিক সাহায্য? জবাবে তার মুখে ক্লান্তিকর হাসি ফুটে উঠলো।
“আমরা অপেক্ষা করতে পারছি না। কিসের জন্য এবং কতদিনের জন্য? আমরা শুধু আমাদের ওপরেই নির্ভর করতে পারি। যুদ্ধ যদি অবশ্যম্ভাবী হয়, আপনাকে প্রথম আঘাত হানতে হবে। বাকু কয়েক মাস ধরে এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যুদ্ধ শুরু করার জন্য আর্মেনিয়ার দিক থেকে কোন কারণ নেই,” বলেন তিনি।
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। গত ৩০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম দেখা যাচ্ছে তুরস্ক আজারবাইজানকে সমর্থন দিচ্ছে। তুরস্ক অনেক শক্তিশালী আঞ্চলিক শক্তি এবং আজারবাইজানের সঙ্গে তাদের জাতিগত ও ভাষাগত সম্পর্ক রয়েছে।
অন্যান্য দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘ এবং ওএসসিই শান্তিপূর্ণ সমঝোতার মাধ্যমে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান জানিয়েছে।
কিন্তু এবার তুরস্ক এবং আজারবাইজান বলছে, নাগোর্নো-কারাবাখে, তাদের ভাষায়, আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বের অবসান ঘটলেই কেবল এই শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে।
তাদের আরো দাবি: অস্বীকৃত এই প্রজাতন্ত্রসহ আর্মেনিয়ার বাহিনীকেও ওই এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক আইনে আজারবাইজানের অংশ বলে স্বীকৃত।
সূত্র: বিবিসি বাংলা