দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ ও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় কতটা প্রভাব ফেলেছে তা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গাড়ির সামনে দীর্ঘ লাইন দেখেই ধারণা করা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে খোলাবাজারে ভোজ্য তেলের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিল।
চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগেই ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো হয়েছে। তা ১৫ মার্চ পর্যন্ত বলবৎ আছে। ছোলার আমদানি শুল্ক ছিল না।
বাজারে তেলের ‘দাম কমেছে মুখে মুখে, বাস্তবে কমেনি’। ভ্যাট কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে কোথাও বোতলের গায়ে লেখা দামে, কোথাও গায়ের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে সয়াবিন তেল।
স্বাভাবিকভাবেই ভিড় বাড়ছে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে। একসময় সরকারি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে নিম্ন আয়ের মানুষের লাইন দেখা যেত। কিন্তু এখন মধ্যবিত্তদেরও লাইনে দেখা যাচ্ছে। আমার পরিচিত অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম বেতনে চাকরি করেন। তাঁরা এখন সরকারি ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রে লাইন দিয়ে পণ্য কেনেন। টিসিবি সূত্রে জানা যায়, খোলা ট্রাকে পণ্য বিক্রি গত বছরের তুলনায় আড়াই গুণ বেড়েছে।
একই সঙ্গে আরেকটি নতুন বিষয় আমাদের সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে শুধু সাধারণ মানুষই নয়, দোকানদার ও ব্যবসায়ীরাও তাঁদের লোক লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য কিনছেন। কারণ টিসিবির পণ্য কিনে তাঁরা বাজারমূল্যে বিক্রি করলে অধিক লাভ করতে পারছেন। কিছুদিন আগে কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ‘টিসিবির চার পণ্যে সাশ্রয় ২৯০ টাকা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বেশ কিছু চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত লোক লাইনে দাঁড় করিয়ে টিসিবির পণ্য কেনাচ্ছেন। এতে অনেক সাধারণ ক্রেতা বঞ্চিত হচ্ছেন। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও তাঁরা পণ্য পাচ্ছেন না। ’
এখন বাজার সামাল দিতে নজরদারির কোনো বিকল্প নেই। ভোক্তা অধিকার যে অভিযান শুরু করেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। টিসিবির পণ্য বিক্রির আওতা আরো বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য বিক্রির যে সূচনা হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কিভাবে স্বস্তিদায়ক করা যায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।