সংকটের বেড়াজালে বিশ্ব মোড়লরা যখন হিমশিম খাচ্ছেন, তখন সংকট মোকাবিলায় সফল নেতৃত্বে শেখ হাসিনা। বিগত দশকে দেশের প্রাকৃতিক কিংবা মনুষ্য সৃষ্ট অথবা রাজনৈতিক সব সংকট সামনে থেকে সামলেছেন তিনি। নেতৃত্বের বিশালত্বকে নিয়ে গেছেন দেশের গণ্ডির বাইরে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এসব সংকটকালীন ইস্যুভিত্তিক রাজনীতির সুফলও ঘরে তুলেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
দলটির নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কয়েক নেতা মানবকণ্ঠকে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সকালের নির্বাহী আদেশ, বিকেলে আদালত স্থগিত করে দেয়; ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হওয়া নিয়ে সৃষ্ট সংকট দেশটি এখনো সামাল দিতে পারেনি, রাশিয়ার সরকার প্রধান ভøাদিমির পুতিন ক্রিমিয়াসহ আঞ্চলিক সমস্যায় জর্জরিত, আরব বসন্তের নামে চিরস্থায়ী অস্থিরতা ভর করেছে মধ্যপ্রাচ্যে। প্রতিবেশী দেশগুলোরও রয়েছে নিজেদের সংকট। বৈশ্বিক এমন পরিস্থিতির মধ্যে একের পর এক সব সংকট সামাল দিচ্ছেন বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। ১/১১’র মতো রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলা করে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিক সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। বিডিআর বিদ্রোহ থেকে সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যু- সব সংকট মোকাবিলায় সফল হয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সর্বশেষ রোহিঙ্গা ইস্যুও সামলেছেন তিনি কূটনৈতিকভাবে। অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার চাপের মধ্যেও রোহিঙ্গা ইস্যু সামাল দিয়েছেন মানবতার চাদরে। চালের বাজারে চলমান অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে রোহিঙ্গা ইস্যুরও প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে সরকারের বিভিন্ন সূত্র। হঠাৎ ভারত চাল রফতানি বন্ধ করে দেয়। অন্যান্য দেশ থেকে চাল আমদানিতে সময় লাগছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা নির্যাতনের কারণে, মিয়ানমার থেকে চাল না আনার একটি দেশীয় চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকটি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের আভ্যন্তরীন সংকটকে পুঁজি করে চীন-ভারতের বাইরের একটি প্রতিবেশী দেশ সরকারকে চাপে ফেলতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করানোর বিষয়ে কাজ করেছে। এর মধ্যে শুরুতে বিএনপিও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছিল।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। শেখ হাসিনার মানবিকতার কাছে হেরে যায় বিএনপির কৌশল। মিয়ানমারে রাখাইন গণহত্যার পরপরই বিএনপি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানায়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালের অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপি দ্রুত ইস্যুটি লুফে নেয়। ২০১২ সালে যখন মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়েছিল, তখন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ ছিল। সেই বিবেচনা থেকে বিএনপি ধারণা করেছিল এবারো হয়তো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থান নেবে। সেই বিবেচনা থেকেই বিএনপি রাখাইন নিপীড়ন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নামে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাখাইন সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যার প্রচণ্ডতা উপলব্ধি করে দ্রুত সীমান্ত প্রহরা শিথিল করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর মাতৃত্বের মানবিকতায় বিএনপিও শেখ হাসিনার কৌশলের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। সরকারপ্রধান রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামলেছেন বেশ দক্ষতার সঙ্গে।
সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ ও মানবিকতায় মুগ্ধ হয় সম্পর্কে চিড় ধরে থাকা মুসলিম দেশগুলো। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তিক্ততার সম্পর্ক থাকা তুরস্কের ফার্স্টলেডি বাংলাদেশে এসেছিলেন। সরকার যে কার্যকর আশ্রয় ও মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা নিয়েছে, তাতে তুরস্ক মুগ্ধ। মালয়েশিয়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার ভূয়সী প্রশাংসা করেছে, পশ্চিমা গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে আখ্যা দিয়েছে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ (মানবতার জননী) হিসেবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি রোহিঙ্গাদের জন্য মমতায় নয় বরং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য বিভিন্ন অভিযোগ করেছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির বিশ্বাসযোগ্যতা মুসলিম দেশগুলো এবং পশ্চিমা বিশ্বে নষ্ট হয়েছে। জাতীয়ভাবেও বিএনপি নিজেদের আরেকবার খেলো রাজনৈতিক দল হিসেবে উপস্থাপন করল। আর দশটা ইস্যুর মতো এটাও বিএনপির জন্য বুমেরাং হয়েছে।
এর আগে উত্তরাঞ্চল ও হাওরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও শেখ হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন। ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আদালতের সঙ্গে বাগড়াও শেষের দিকে। আইনিভাবেই এ সমস্যা মোকাবিলার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শুরুতেই বড় ধরনের হোঁচট খায় বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে। সরকারের শুরুতে এই দুর্ঘটনা ছিল বার্নিং ইস্যু। ওই ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। দেশের ইতিহাসে এটা ছিল অন্যতম বিয়োগান্তক ঘটনা। এ ঘটনারও বিচার হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে। এরপর সরকারের জন্য বড় ইস্যু হয়ে ওঠে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ। পরবর্তী সময়ে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তখনো শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করেন। সে সময়েই সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হয়। এটাও ছিল শেখ হাসিনার কূটনৈতিক বিজয়। এরপরপরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হয়; বিভিন্ন বিরোধিতার মুখেও নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দৃঢ়তা থেকে সরকারপ্রধান এ কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করেন। ওই সময়েই ব্যাংকিং খাতে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেশ ক’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার। বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচন আয়োজন করে পুনরায় ক্ষমতাসীন হয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদৃষ্টি, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং জনকল্যাণমুখী চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে বিস্ময়কর সাফল্য দেখিয়ে দেশ-বিদেশে ঈর্ষণীয় হয়েছেন। দল ও দেশ পরিচালনায় বিচক্ষণতা ও নেতৃত্বের দৃঢ়তায় তিনি এক নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলছেন। তৃণমূলে যেমন তিনি, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতার মধ্যেও তার হাত ধরে সফলতা এসেছে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। কূটনীতি, অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের মতো সব ক্ষেত্রেই ইর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী তার নেতৃত্ব আজ প্রশংসিত। বিশ্বরাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ১৬ কোটি মানুষের এই বাংলাদেশ।
রাজনীতি আর অর্থনীতির পাশাপাশি শেখ হাসিনা বেশি সফল হয়েছেন কূটনীতিতে। বিশ্বরাজনীতিতে মুখোমুখী অবস্থানে থাকা প্রভাবশালী দেশ ভারত ও চীন। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে তিনি দুই প্রভাবশালী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করেছেন। তার যাদুকরী নেতৃত্বেই বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সম্পর্ক ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বে স্থাপিত হয়েছে মাইলস্টোন। গত ৩০ বছরে প্রথম কোনো চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন তার আমলেই। শেখ হাসিনার কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভিযান নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গত নয় বছরের মধ্যে এই প্রথম মিয়ানমার নিয়ে বিবৃতিতে সম্মত হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত চীন, এবং চীনের মিত্র রাশিয়াও।
সবকিছু ছাপিয়ে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় অভূত দক্ষতা দেখিয়েছেন। ৫ জানুয়ারির একপাক্ষিক নির্বাচনের পরও তিনি দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টির নজির স্থাপন করেছেন। নানামুখী কৌশলে ৯৩ দিনের টানা অবরোধের পরও সরকার পরিচালনা করছেন। প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচন নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচিত হলেও সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার ক্ষমতা ও সিদ্ধান্তকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেননি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার কাছে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। বরং তিনিই এখন ঘোষণা দিয়েছেন ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন আর দেশে হবে না।
এ জন্যই আওয়ামী লীগের নেতারা প্রায়ই বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপির বড় প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনা। সর্বশেষ রাজশাহীতে এক দলীয় সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী- শেখ হাসিনাকে বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ আখ্যা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে শেখ হাসিনাকে বেশি ভয় পায় বিএনপি। রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে, আজকে ষড়যন্ত্রকারীরা তার প্রাণনাশের চেষ্টা করছে।