কলেজটি সরকারি। উচ্চমাধ্যমিক স্তরে তিনটি বিভাগে ২২টি বিষয় আছে। কিন্তু ১০টি বিষয়েই কোনো শিক্ষক নেই। ফলে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ অতিথি শিক্ষক দিয়ে টেনেটুনে ক্লাস চালাচ্ছে। কিন্তু কম টাকার কারণে ভালো অতিথি শিক্ষকও মিলছে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের দাবি করেছে।
তীব্র শিক্ষকসংকট থাকা কলেজটি হলো পাবনা সরকারি কলেজ। জানতে চাইলে কলেজের নতুন অধ্যক্ষ মো. আবদুল মান্নান খান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকসংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছে না। শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকসংকট কাটাতে নতুন পদ সৃষ্টিসহ শিক্ষক পদায়নের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। দ্রুত কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাবনা শহরের গোপালপুর এলাকায় অবস্থিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একসময় পাবনা কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ছিল। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে আগে শুধু কমার্সে ডিপ্লোমা কোর্স পড়ানো হতো। ২০১৬ সালের ১২ মে সরকার এটিসহ সারা দেশের ১৬টি কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটকে পূর্ণাঙ্গ কলেজে রূপান্তর করে। এরই ধারাবাহিকতায় পাবনা কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটের নামকরণ করা হয় ‘পাবনা সরকারি কলেজ’। বর্তমানে এখানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগে পড়ানো হয়। পাশাপাশি স্নাতক কোর্স চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের একাদশ শ্রেণিতে ৫৪৯ জন ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পর্যাপ্ত শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করে কলেজে রূপান্তর করায় সমস্যা বাড়ছে।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যে ১০টি বিষয়ে একজনও শিক্ষক নেই সেগুলো হলো, বিজ্ঞান বিভাগে রসায়ন ও জীববিজ্ঞান; মানবিক বিভাগে অর্থনীতি, কৃষিশিক্ষা, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকর্ম এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ব্যবস্থাপনা, উৎপাদন ও বিপণন।
ইংরেজির একজন শিক্ষক বলেন, উল্লিখিত বিষয়ের মধ্যে রসায়ন, জীববিজ্ঞান, অর্থনীতি, ব্যবস্থাপনা বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিক্ষক না থাকায় খুব সমস্যা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা ঠকছে।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ও কয়েকজন বেকার চাকরিপ্রার্থীকে অতিথি শিক্ষক বানিয়ে ক্লাস নেওয়া হয়। কিন্তু ক্লাসপ্রতি মাত্র ২০০ টাকা বরাদ্দ থাকায় এ বিষয়ে ভালো অতিথি শিক্ষকও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওই সব বিভাগে ঠিকমতো ক্লাস হয় না।
একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, প্রাইভেট পড়ে তারা ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করে।
কলেজের দুজন শিক্ষক জানালেন, কলেজটি যখন কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ছিল, তখন শিক্ষকদের পদ ছিল সাতটি। এখনো সেই সাতটিই রয়ে গেছে। এই সাত পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ছয়জন। ইংরেজির একজন নারী শিক্ষক কয়েক বছর ধরে বিদেশে আছেন, ফলে তাঁর পদের বিপরীতে কাউকে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। পদের বাইরে ১১ জন শিক্ষক সংযুক্ত (অন্য জায়গায় পদায়ন হলেও সাময়িক সময়ের জন্য এখানে কাজ করছেন) থাকলেও তা ভারসাম্য করে করা হয়নি। যেমন, হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মূল দুজন শিক্ষকের বাইরে আরও দুজন শিক্ষক সংযুক্ত আছেন। অথচ সমপর্যায়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সাতটিসহ মোট ৬৬ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আসলে সারা দেশেই এই সমস্যা। এই সমস্যা দূর করতে সদ্য ফল প্রকাশিত ৩৬তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে এসব কলেজে নিয়োগ দেওয়া হবে।
