উত্তরা গণভবনে অবৈধভাবে গাছকাটা ও অন্যান্য অনিয়মের দায়ে নাটোর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দসহ তিন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে গাছ কাটার ঠিকাদার সোহেল ফয়সালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বরখাস্ত হওয়া অন্য দুজন হলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডি) জিয়াউর রহমান ও বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসও) মো.কামরুজ্জামান।
নাটোর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,উত্তরা গণভবনে অবৈধভাবে গাছ কাটা ও অন্যান্য অনিয়মের ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের গঠন করা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সত্যতা পেয়েছে মর্মে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সেখানকার তিন প্রকৌশলী, দুই তত্ত্বাবধায়ক ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে।
সুপারিশের ভিত্তিতে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গতকাল বৃহস্পতিবার এক চিঠিতে ওই তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন-১) মোছা.সুরাইয়া বেগমের স্বাক্ষরিত এই চিঠি গতকাল বিকেলে নাটোরে গণপূর্ত দপ্তরে পৌঁছে। একই সময় এই চিঠির অনুলিপি জেলা প্রশাসনেরও কাছে আসে।
জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান,মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
গণপূর্ত বিভাগ নাটোর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাময়িক বরখাস্তের আদেশ আসার আগে নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমানকে নাটোর থেকে প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করার চিঠি আসে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ২৫ অক্টোবর নাটোর ছেড়ে যান। একই সময় এসডি ও এসও কে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।
মশিউর রহমান আকন্দ গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে জানান, ওএসডি করার চিঠি পেয়ে তিনি নাটোর ছেড়ে এসেছেন। তবে বরখাস্তের চিঠি তিনি তখনো পাননি বলে জানান।
১৭ অক্টোবর অবৈধভাবে গাছ কাটা ও অন্যান্য অনিয়মের ব্যাপারে প্রথম আলোতে খবর ছাপা হলে উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটি ওই দিনই জরুরি সভা করে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুনের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে।
তদন্ত প্রতিবেদনে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দ, ঠিকাদার সোহেল ফয়সাল এবং গণভবনের তত্ত্বাবধায়ক আব্দুস সবুর তালুকদারকে প্রত্যক্ষভাবে এবং এসডি জিয়াউর রহমান, এসও মো.কামরুজ্জামান ও তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেমকে পরোক্ষভাবে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ১ হাজার ৯২ সিএফটি গাছ কাটা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র ১৮ হাজার টাকায় গাছ বিক্রি করা হলেও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকার গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে গণভবন সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য সাত দফা সুপারিশও করা হয়।