স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল কাতালোনিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার দুই দিন পর গতকাল রোববার ওই অঞ্চলের রাজধানী বার্সেলোনায় বিক্ষোভ করেছে কয়েক লাখ মানুষ। তারা স্পেনের সঙ্গে থাকতে চায়। একই দিন একটি জরিপের ফলাফলে বলা হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন হলে স্বাধীনতাবিরোধীরাই জিতবে।
তাহলে কি স্বাধীনতা চায় না কাতালানরা। ১ অক্টোবর গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষেই রায় দিয়েছিল তারা। তবে ওই গণভোটে ভোট পড়েছিল মাত্র ৪৩ শতাংশ।
গত শুক্রবার কাতালান পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরপরই অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। ২১ ডিসেম্বর ওই নির্বাচন হবে। যদিও কাতালান নেতা কার্লোস পুজেমন কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন না জানিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে মাদ্রিদের বিরোধিতা করার আহ্বান জানান।
এ অবস্থায় স্পেনের জাতীয় পতাকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকা নিয়ে কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় গতকাল বিক্ষোভ-সমাবেশে অংশ নেয় কয়েক লাখ মানুষ। স্পেনের সঙ্গে থেকে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে তারা কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা বাতিলের দাবি তোলে।
পুলিশ জানিয়েছে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল প্রায় তিন লাখ মানুষ। তবে আয়োজকেরা দাবি করেন অন্তত ১১ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিল বার্সেলোনায়। তারা স্বাধীনতা ঘোষণা করার ‘অপরাধে’ পুজেমনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায়।
স্পেন থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ১ অক্টোবরের গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়যুক্ত হলে, এর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে গত শুক্রবার কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হয়।
স্বাধীনতা ঘোষণার ঠিক আগে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় এক হাজার লোকের ওপর জরিপ চালায় জরিপ সংস্থা সিগমা ডস। গতকাল জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। জরিপ অনুযায়ী, ভোট হলে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতাপন্থী দলগুলো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাবে। আর স্বাধীনতাবিরোধীরা পাবে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট। স্বাধীনতাবিরোধী বলে পরিচিত এল মন্দো পত্রিকায় জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়।
এদিকে কাতালোনিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা কার্লোস পুজেমন যদি বেলজিয়ামে রাজনৈতিক আশ্রয় চান, তা মোটেও বাস্তবসম্মত হবে না বলে দেশটির অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী থেও ফ্রাঙ্কেন মন্তব্য করেছেন। যদিও পুজেমন বেলজিয়ামে যেতে চাইছেন—এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এর মধ্যেই বেলজিয়ামের মন্ত্রীর কাছ থেকে এই বক্তব্য এল। বেলজিয়ামের মন্ত্রী জানান, কার্লোস পুজেমনের গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বেলজিয়াম রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্রে ইইউ নাগরিকেরা রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। এর একটি হলো বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রী থেও ফ্রাঙ্কেন বলেছেন, স্পেন ইতিমধ্যে পুজেমনের কারাদণ্ডাদেশ নিয়ে আলোচনা করছে। তিনি ন্যায়বিচার পাবেন এর নিশ্চয়তা কি আছে—এই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
কাতালান সংকট শুরুর পর থেকে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের নেতারা এই ইস্যুটিকে স্পেনের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বেলজিয়াম। এর আগে বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী চার্লেস মিশেল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মধ্যে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল-এর খবরে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত কাতালান নেতা কার্লোস পুজেমন আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট আছেন এবং তিনিই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। এই মন্তব্য করেছেন পুজেমনের ডেপুটি উরিয়াল জুংকিরেস।
