দুই দফা বন্যায় কুড়িগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার আনন্দ-উৎসব ফিকে হয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলে পরিবারগুলো এখনো বন্যার ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে পারেনি।
মনের মধ্যে দুঃখ-কষ্ট-ক্ষোভ চেপে রেখে শুধু পূজার কার্যাদি পালন করছেন তারা। একই অবস্থা জেলার সর্বত্র।
রোববার সদরের কাঁঠালবাড়ী তোপের বাজার কালিমন্দিরের সেবায়েত শ্রী বিমল চন্দ্র (৭৫) তিনি জানান, প্রতি বছর যেভাবে আনন্দ-উৎসব হয়, এবার আর তা হচ্ছে না। বন্যায় এলাকার সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সরকারিভাবে যে সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে তাই দিয়ে নামমাত্র পূজা হচ্ছে।
একই এলাকার গয়ারী গ্রামের কারিগর নরেন চন্দ্র (৪২)পাল জানান, এবার ছয়টি প্রতিমা বানিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত পাঁচটি বিক্রি হয়েছে। তাছাড়াও গত বছর যে ঠাকুর ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেছি। এবার সেগুলো ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
জেলা পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রবী বোস জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় বেশ কয়েকটি পূজা মণ্ডপ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লোকজন কষ্ট করে সেগুলো পুনরায় আয়োজন করার উপযোগী করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মণ্ডপগুলোতে সরকারি সহযোগিতা আরও বাড়ানো উচিত।
তিনি বলেন, এ বছর কুড়িগ্রাম জেলায় ৪৯৯টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি মণ্ডপে স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে সার্বিক দিক দেখভাল করার জন্য।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ছত্রপুর এলাকায় প্রতি বছর জেলে ও কোচপাড়া মিলে প্রায় ১২০টি পরিবারে দুটো মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়। এবারের করালগ্রাসী বন্যায় জেলে পরিবারগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় একটি মণ্ডপ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব পরিবারে উৎসবের কোনো আমেজ নেই।
জেলেপাড়া গোবিন্দ মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রী নবীন চন্দ্র সরকার জানান, আমাদের জেলেপাড়ায় মন্টু দাস ও সাগর দাসের বাড়ির সামনে দুটো মণ্ডপে প্রতি বছর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার মন্টু দাসের বাড়ির সামনের পূজা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি জানান, এ বছর চালের মূল্য বেশি হওয়ায় বরাদ্দ ৫০০ কেজি চাল বিক্রি করে প্রায় ১৮ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। সেটি দিয়েই পূজার খরচ চালানো হচ্ছে।
জেলেপাড়ার মনকুমার দাসের স্ত্রী পূর্ণিমা রানী (২১) জানান, টানাটানির কারণে এবার কিছুই কেনা হয়নি। একটা মাত্র সন্তান। তাকেও কিছু কিনে দিতে পারেনি ওর বাবা।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মাস্টার জানান, আমার ইউনিয়নে ৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলেপাড়ায় অভাব-অনটনের কারণে একটি মণ্ডপ বন্ধ হয়ে গেছে। ওরা আমার কাছে এসেছিল। সরকারের পাশাপাশি আমরাও কিছু সহযোগিতা করব।
জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, পূজা উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতিটি মণ্ডপের জন্য ৫০০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার ৪৯৯টি পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে।