সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকের পর রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। ৫০ কেজির বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমায় কেজিতে দাম কমেছে ১ থেকে ২ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়তে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার চটের বস্তার পরিবর্তে প্লাস্টিকের বস্তায় চাল আমদানির সুযোগ দেয়ায় বাজারে সরবরাহ বাড়ছে। এতে চালের দামও কমেছে। বাজারে মোটা চাল কেজিপ্রতি ২ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। আগে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকার উপরে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকায়। তবে অন্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাবুবাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৮-৬২ টাকা ও নাজিরশাইল ৬৬-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়। সরবরাহ বাড়লে এসব চালের দামও কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েক দিন আগেও মিল মালিকরা চাহিদা অনুযায়ী চাল সরবরাহ দিতে অনীহা প্রকাশ করতেন। তারাই এখন ফোন করে সরবরাহ আদেশ নিচ্ছেন। বাদামতলী-বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী মেসার্স তাসলিমা রাইস এজেন্সির মালিক মো. আবদুর রহিম বলেন, আমরা এখন বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা কমে মোকাম থেকে কিনতে পাচ্ছি। এর ফলে কেজিতে ১ টাকা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা কমে বিক্রি করতে পারছি। তিনি বলেন, আরো কমে কিনতে পারলে, আমাদের পক্ষে আরো কমে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ফলে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক চাল আমদানি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে। দুই-তিনদিন আগে এসব চাল ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। আর রত্না জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা কেজি দরে। দুই-তিন দিন আগে এসব চাল ৫২ থেকে ৫৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল।
কাওরানবাজারের চাল বিক্রেতা মহিউদ্দিন সরকার বলেন, আগামী রোববারের আগে খুচরা দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ আগের চাল বিক্রি শেষ হলেই তারপর দাম কমা শুরু হবে।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চালের দাম কমতে শুরু করেছে। নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের প্রথমে নতুন ফসল উঠবে। কাজেই চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। চালের কোনো সংকট নেই বলেও দাবি করেন তিনি। বন্যা ও হাওরের পানি বেড়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে বেশি চাল আমদানি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শুল্ক কমিয়েও চালের বাজারে স্বস্তি আনতে পারছিল না সরকার। এ অবস্থায় মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। সর্বশেষ মঙ্গলবার বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রী। সরকার ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে চালের দাম কমে আসবে বলে ঘোষণা দেন ব্যবসায়ীরা। এর পরই চালের দাম কমতে শুরু করে।
