রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নৃশংসতার বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল প্যানেল ‘ইউএস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ (ইউএসসিআইআরএফ)। এর চেয়ারম্যান ডানিয়েল মার্ক মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে নিন্দা জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন। আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষার করার। তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ভয়াবহতাকে মানবিক বিপর্যয় বলে আখ্যায়িত করেন। ইউএসসিআইআরএফ হলো একটি নিরপেক্ষ, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বিপক্ষীয় কমিশন। বিশ্বে এমন প্রতিষ্ঠান এটাই প্রথম। এই কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘন পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কংগ্রেসের কাছে সুপারিশ পেশ করে। নিজস্ব ওয়েবসাইটে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ১১ই সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে ইউএসসিআইআরএফ। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ইস্যু করা ওই বিবৃতির শিরোনাম ‘ ইউএসসিআইআরএফ স্ট্রংলি কনডেমস ভায়োলেন্স ইন বার্মা’স রাখাইট স্টেট অ্যান্ড কলস ফর ইফোর্টস টু প্রটেক্ট রোহিঙ্গা মুসলিমস’। এখানে ওই বিবৃতিটির অনুবাদ হুবহু তুলে ধরা হলোÑ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বেসামরিক ও নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর হামলায় কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে ইউএসসিআইআরএফ। এরই মধ্যে সেখানে কয়েক শত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রতি পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। আগামী কয়েকদিন বা সপ্তাহে এই সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বহু গ্রামের পুরোটাই একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। কসাইখানায় জবাই করার মতো অনেক পরিবারের সদস্যদের গলা কেটে হত্যা করেছে। এমনকি শরণার্থী হিসেবে যারা পালিয়ে যাচ্ছে তাদের পথের ওপর তারা স্থল বোমা পেতেছে। ইউএসসিআইআরএফ’র চেয়ারম্যান ডানিয়েল মার্কের মতে, এতে সৃষ্টি হয়েছে এক বিস্ময়কর মানবিক বিপর্যয়। ডানিয়েল মার্ক বলেন, রাখাইনে সাধারণ মানুষের ওপর হামলা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে মিয়ানমারের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তার ভাষায়, আমরা মিয়ানমারের কার্যত মূল নেত্রী অং সান সুচির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই, আপনি রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে বা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নিন্দা জানান। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক বিষয়ে যেসব প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা অবশ্যই সমুন্নত রাখতে হবে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীকে।
২৫ শে আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হয়। তারপর থেকে তা দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সামঞ্জস্যহীন ও বাছবিচারহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। বেআইনি ও ভয়াবহ এমন কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে তারা যাতে একটি শান্তিপ্রিয় জনগোষ্ঠী তাদের জীবন নিয়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মির সহিংসতা অসংখ্য মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এমন হামলা, সহিংসতারও নিন্দা জানায় ইউএসসিআইআরএফ। সম্মিলিতভাবে নিরীহ রোহিঙ্গা, কামান মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু ও অন্যরা এই সহিংসতার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
বেশির ভাগ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশে। এ দেশটি বন্যায় ভুগছে। সম্পদের সঙ্কট রয়েছে। চেয়ারম্যান মার্ক বলেন, কয়েক দশক ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ সঙ্কট শুরুর আগে এখানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৫ লাখ মানুষ। শুধু গত বছরেই সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছেন প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম।
এমন অবস্থায় জাতিসংঘ, মানবিক ত্রাণ সহায়তামুলক সংগঠন, বাংলাদেশ, আসিয়ানের মতো আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য মিয়ানমারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছে ইউএসসিআইআরএফ। ওই সহযোগিতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্য বিপন্ন জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত চাহিদা সরবরাহ ও সেবা নিশ্চিত করতে হবে অবিলম্বে।
