অক্টোবর মাসে বাজারে এসেছে বলিউড তারকা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর আত্মজীবনী ‘অ্যান অর্ডিনারি লাইফ: এ মেমোর’। মলাটে সাদামাটা বললেও নওয়াজের আত্মজীবনীর ভেতরের গল্পগুলো মোটেও সাধারণ নয়। গায়ের রং কালো বলে যাঁরা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে সুন্দরী নায়িকাকে বেমানান মনে করতেন, তাঁদের এই বইটি সবার আগে পড়া উচিত। ভারতের মুজাফফর নগরের ছোট্ট এক মফস্বল শহরের ছেলে নওয়াজউদ্দিনের প্রেমে পাগল হওয়া নারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। তবে নওয়াজউদ্দিন তাঁদের সবার প্রতি ন্যায়বিচার করেননি। আত্মজীবনীতে এই শিল্পী নিজেই স্বীকার করেছেন, ‘আমি খুব স্বার্থপর। প্রেমের বেলায় কেবল নিজের প্রয়োজন মেটানোর কথাই ভেবেছি। আমার সব প্রেমিকার এই একই অভিযোগ ছিল।’
দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি) থেকে পড়াশোনা করার পর নওয়াজউদ্দিন মুম্বাইয়ের একটি নাট্যদলে যোগ দেন। সেখানে তাঁর পরিচয় হয় সুনিতা নামের এক নারীর সঙ্গে। কাকতালীয়ভাবে সেই মেয়েও ছিলেন এনএসডির শিক্ষার্থী। কিন্তু পরে নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর কখনোই দেখা হয়নি।
নওয়াজের ভাষায়, ‘সুনিতা আমার জীবনে ভীষণ খরার পর এক পশলা বৃষ্টির মতো।’
সুনিতা এই তারকার জীবনের প্রথম প্রেম। তখন দুজনের বয়স কম ছিল, কিন্তু প্রেম ছিল প্রগাঢ়। এই অভিনেতার মুম্বাইয়ের মিরা রোডের বাড়িতে সেই প্রেমিকার ছিল নিয়মিত যাতায়াত। ঘরের দেয়ালজুড়ে ছোট ছোট অক্ষরে এই মেয়ে লিখে রেখেছিল তাঁদের দুজনের নাম। কিন্তু একবার ছুটি কাটাতে গ্রামে যাওয়ার পর থেকেই সুনিতার মধ্যে বিশাল পরিবর্তন দেখতে পান নওয়াজ। আচমকা মেয়েটি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেন। ‘দুই পয়সার’ শিল্পী নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর চিরস্থায়ী সুখ হবে না ভেবেই হয়তো সেই প্রেম থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়েছিলেন সুনিতা।
প্রথম প্রেম ভেঙে যাওয়ায় অন্তর চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছিল নওয়াজের। এমনকি একপর্যায়ে আত্মহত্যার কথাও চিন্তা করেছিলেন। ভেবেছিলেন, এতটা ভালোবাসা আর কোনো দিন কোনো নারীকেই তিনি দিতে পারবেন না।
স্ত্রী অঞ্জলির সঙ্গে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীনওয়াজউদ্দিন ভুল ভেবেছিলেন। আসলে তাঁর হৃদয়ে ভালোবাসার অভাব নেই। ইতিমধ্যে চলচ্চিত্রে তাঁর নামডাক বাড়তে থাকে। নিউইয়র্কের এক রেস্তোরাঁয় নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর পরিচয় হয় এক অসম্ভব সুন্দরী ওয়েট্রেসের সঙ্গে। নওয়াজের টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে এসে সুজান নামের সেই মেয়ে থমকে যান। জানতে চান, ‘তুমি কি অভিনেতা? আমি তোমার সিনেমা দেখেছি।’ ব্যস, সেখান থেকেই শুরু নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর দ্বিতীয় প্রেমকাহিনি।
ভালোবাসার টানে সুজান নওয়াজের কাছে মুম্বাইয়ে চলে আসেন। এক ছাদের নিচে থাকতে শুরু করেন দুজন। মাঝেমধ্যে এ অভিনেতাকে শুটিং সেটেও সঙ্গ দিতেন এই বিদেশিনী। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে হয় সুজানকে।
নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীনওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী তখন নীহারিকা সিংয়ের সঙ্গে ‘মিস লাভলি’ ছবির কাজ করছেন। একদিন এই ছবির একটি নাচের দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে কেমন যেন জড়সড় হয়ে যান নীহারিকা। বিষয়টি নওয়াজের চোখ এড়ায় না। তিনি টের পান নীহারিকা তাঁকে কয়েক দিন ধরে এড়িয়ে চলছেন। কিন্তু অনেকবার জানতে চাওয়ার পরেও নায়িকা এ বিষয়ে কিছু বলতে চান না। সম্পর্ক সহজ করার জন্য একদিন নিজের বাড়িতে সহশিল্পীকে আমন্ত্রণ জানান নওয়াজ। নীহারিকা সানন্দে সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এরপর নওয়াজকেও নিজের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেন। নীহারিকার নৈশভোজের আমন্ত্রণে গিয়ে তাঁকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন নওয়াজউদ্দিন। নীহারিকার ঘরের আলো-আঁধারি এই তারকাকে আরও রোমান্টিক করে তোলে। কোনো রাখঢাক না রেখেই নিজের জীবনীতে এ অভিনেতা লিখেছেন, ‘আমার মতো এক গেয়ো ভূতও সেদিন নীহারিকাকে দেখে শিহরিত হয়। আমি কোনো কথা না বলে আমার বাহুতে ওকে তুলে নিয়ে সোজা শোবার ঘরে ঢুকি।’
নিউইয়র্কের সুজানকে ভুলে তত দিনে নওয়াজ নীহারিকার প্রেমে মজেছেন। কিন্তু শ্বেতাঙ্গিনী সুজান কিন্তু নওয়াজকে ভুলতে পারেননি। অনবরত তাঁকে মেইল পাঠাতে থাকেন। কিন্তু নওয়াজ নিরুত্তর। নওয়াজের জীবনের প্রথম প্রেম বাদে বাকি দুটি প্রেম ছিল স্রেফ শরীরী। এ কথা বুঝতে পেরে নীহারিকা তাঁকে দূরে সরিয়ে দেন। নওয়াজের প্রতি তাঁর বাড়ির ও মনের দুয়ার আজীবনের জন্য বন্ধ করে দেন এই বলিউড তারকা। নীহারিকার সঙ্গে নওয়াজের সম্পর্ক টিকেছিল দেড় বছর।
তৃতীয় প্রেম ভেঙে যাওয়ার পর অতি আশ্চর্যজনকভাবে এক নারীর সঙ্গে দেখা হয় এই ‘মাঝি-দ্য মাউন্টেনম্যান’ তারকার। তখনো তিনি জানতেন না এর মাত্র এক বছর পরেই অঞ্জলি নামের সেই নারী তাঁর স্ত্রী হবেন। অঞ্জলি ও নওয়াজউদ্দিনের সংসারে দুই সন্তান। ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘পিপলি লাইভ’, ‘তালাশ’, ‘বোম্বে টকিজ’, ‘বলধাপুর’, ‘বাবুমশাই বন্দুকবাজ’, ‘মাঝি-দ্য মাউন্টেনম্যান’ ও ‘মম’ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই অভিনেতার উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ। পেঙ্গুইন ইন্ডিয়া থেকে প্রকাশিত এ অভিনেতার আত্মজীবনীর সহলেখক সাংবাদিক ঋতুপর্ণ চ্যাটার্জি।