প্রধানমন্ত্রী অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে আপত্তি নেই গণফ্রন্ট ও গণফোরামের। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সরকার ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে দল দুটি। সেইসঙ্গে স্বাধীনতার পরে যেসব নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তাদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনেরও সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে অনুষ্ঠিত ইসি সংলাপে এসব মত দেয়া হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। বিকেলে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিয়ে ২২ দফা সুপারিশ উত্থাপন করে। সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- প্রবাসীদের ভোটাধিকার, নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি, কালো টাকার খেলা বন্ধ, ঋণ খেলাপিদের জামিনদারকে নির্বাচনে অযোগ্য, নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার বন্ধ, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্রবাহিনীকে যুক্ত করা ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
সংলাপ শেষে কামাল হোসেন বলেন, সুষ্ঠু ভোটে দুটি বিষয় অন্যতম বাধা। একটা মানি পাওয়ার ও অন্যটি মাসল পাওয়ার। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন যে সরকার থাকবে ও যে প্রশাসন থাকবে তাদের নিরপেক্ষ থাকতে হবে। আমরা কমিশনকে বলেছি- যেন আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে সকালে চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে গণফ্রন্টের ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। দুই ঘণ্টার মতবিনিময় শেষে দলটির চেয়ারম্যান জানান, তার দলের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ সুপারিশ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বর্তমান সরকারকে সংবিধান সংশোধন করে হলেও (তত্ত্বাবধায়ক নয়, অরাজনৈতিক সরকার নয়) একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বাধীনতার পরে যেসব নিবন্ধিত দলের সংসদে প্রতিনিধিত্ব ছিল তাদের সমন্বয়ে একটি সরকার গঠন করা যেতে পারে। প্রয়োজনে সমঝোতার মাধ্যমে সে সরকারের প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের কেউ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না।
দলটির অন্য প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন করা; নাম ও প্যাড সর্বস্ব, অফিসবিহীন রাতারাতি গড়ে ওঠা অনিবন্ধিত দলগুলো যাতে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে জোট করতে না পারে সেজন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন; নির্বাচনের অন্তত ছয়মাস আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দলীয় প্রধানের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া; সীমানা পুনর্বিন্যাস করার জন্য আইনি কাঠামো সংস্কার করা, পাশাপাশি বাস্তবতার নিরিখে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ন্যূনতম সংখ্যা ৩৫০/৪৫০টি করা; প্রবাসীদের ভোটার করা; নারী আসন বৃদ্ধি, প্রতি জেলায় একজন নারী সংরক্ষিত আসনে নিয়োগ; ধর্মবিরোধী দলের নিবন্ধন বাতিল ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। আর ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়েছে।