জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকেরা। ছবি: বিসিবিপ্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন শেষে অস্ট্রেলিয়া দলের মিডিয়া ম্যানেজারকে একটা কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ সফরে আসা স্বদেশি সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন কখন হোটেলে ফেরার বাস ছাড়বে।
দৃশ্যটা গত বছর ইংল্যান্ড সিরিজেও দেখা গেছে। নিরাপত্তার কারণে ইংরেজ সাংবাদিকেরা থেকেছেন টিম হোটেলে। মাঠে যাওয়া-আসাও তাঁদের দলের সঙ্গেই। খেলার বাইরে খুব একটা ঘোরাঘুরির সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সফরে যত দিন তাঁরা ছিলেন একটা ধরাবাঁধা রুটিনের মধ্যে যেতে হয়েছে। একই নিয়ম অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিকদেরও। যদিও অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক বহরটা ইংরেজদের মতো অতটা বড় নয়। প্রতিবেদক-আলোকচিত্রী মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮। প্রতিবেদকদের বেশির ভাগই তরুণ।
নিরাপত্তার অজুহাতে এই সিরিজ স্থগিত হয়েছিল ২০১৫ সালের অক্টোবরে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েই অবশেষে অস্ট্রেলিয়া এসেছে বাংলাদেশে। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকদেরও। দলের সঙ্গে ঘড়ি ধরে মাঠে আসেন, প্রেসবক্সে কাজ শেষ হোক বা না হোক নির্দিষ্ট সময়ে টিম হোটেলে ফেরেন। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ানে’র হয়ে দশ বছর কাজ করছেন অ্যান্ড্রু ফকনার। অ্যাডিলেড থেকে আসা এই প্রতিবেদক বললেন, এমন অভিজ্ঞতা তাঁর আগে কখনো হয়নি, ‘অন্য রকম অভিজ্ঞতাই হচ্ছে। তবে দলের সঙ্গে যাওয়া-আসাটা খারাপ লাগছে না। নিরাপত্তার কারণেই এই রুটিন মানা হচ্ছে।’
অন্য সহকর্মীদের মতো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার লুইস ক্যামেরনও এবার প্রথমবারের মতো এসেছেন বাংলাদেশে। স্থানীয় সাংবাদিকদের কেউ কেউ তো শুরুতে তাঁকে স্যামুয়েল ফেরিসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছিলেন। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বিদায়ের পর সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেদক ফেরিসকে ডায়াসে ডেকে নাটকের জন্ম দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, মনে আছে নিশ্চয়ই।
যেহেতু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটে কাজ করেন, দলের সঙ্গে থাকাটাই স্বাভাবিক। ক্যামেরন যদিও জানালেন, টিম হোটেল কিংবা দলের সঙ্গে যাওয়া-আসা তাঁদের বাধ্যতামূলক নয়। তবে এবার থাকছেন নিরাপত্তার কারণে। এঁদের মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম ক্রিকইনফোর হয়ে বাংলাদেশে আসা অ্যাডাম কলিন্স। তাঁর থাকা, মাঠে যাওয়া-আসা সবই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে।
সিরিজ যেহেতু শেষ দিকে, কেমন গেল সফরটা? ফকনারের মুখে তৃপ্তির হাসি, ‘এবার প্রথম এলাম বাংলাদেশে। নিজের আগ্রহেই এসেছি। অন্য রকম অভিজ্ঞতা হলো। এখানকার সবকিছুই ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে মানুষ আর এখানকার খাবার। কিছুতেই বিরক্ত লাগেনি। মাঠের খেলাটাও ভালো হচ্ছে। সবকিছুই উপভোগ করেছি।’
একই কথার পুনরাবৃত্তি ‘দ্য এজ’-এর প্রতিবেদক ডেনিয়েল চার্নির, ‘সাড়ে তিন বছরের ক্রীড়া সাংবাদিকতায় এটাই আমার প্রথম ক্রিকেট ট্যুর। অনেক মজা হয়েছে। যদিও নিরাপত্তার কারণে খুব বেশি ঘোরাঘুরির সুযোগ হয়নি। ঢাকায় এক-দুই জায়গায় গিয়েছি। ভালোই লেগেছে। নির্দিষ্ট ছক মেনে চলতে হলেও এতে কাজে কোনো প্রভাব ফেলেনি।’ চট্টগ্রাম টেস্টের ফল কী হতে পারে, চতুর্থ দিন সকালে ক্যামেরনের কাছে জানতে চাইলে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী, ‘অস্ট্রেলিয়া সম্ভবত জিতবে। তবে বাংলাদেশও ভালো লড়াই করবে।’
ক্যামেরনের ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়েছে। এ ছাড়া সিরিজটা নানা কারণে মনে থাকবে অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকদের। হয়তো সবচেয়ে বেশি মনে পড়বে টেস্টে বাংলাদেশের কাছে প্রথমবারের মতো হারের স্মৃতিটা!