প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা) ছুটিতে থাকাকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। এর প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আপিল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতিও রয়েছেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটিকালীন আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সকাল ১০টা পর্যন্ত আপিল বিভাগের কার্যক্রম চলবে। এর পর নিয়মানুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য বিচারক ও আইনজীবীরা মতবিনিময় করবেন।
এর আগে সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অসুস্থতার কারণে ১ মাসের ছুটির বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন।
২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এসকে সিনহা। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের সঙ্গে তার মত পার্থক্য দেখা দেয়। নিম্ন আদালতের বিচারকদের আচরণ বিধির গেজেট, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠে। সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন সময়ে বক্তব্যও দেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে যায়। ওই মূল রায়টি লেখেন প্রধান বিচারপতি। তিনি রায়ে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ, রাষ্ট্র-সমাজ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, সংসদ সামরিক শাসনসহ নানা বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেন। একই সঙ্গে অভিযোগ উঠে রায়ে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খাটো করেছেন। রায়ের পর প্রধান বিচারপতি সরকারি দলের সমালোচনার মুখে পড়েন। এ সময় প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও ওঠে।
জাতীয় সংসদেও প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করেন এমপিরা। একই সঙ্গে এই দাবিও ওঠে যে, চলতি অবকাশের পূর্বে প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হবে।
বিচারপতি সিনহার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি। কিন্তু সমালোচনার মুখে থাকা প্রধান বিচারপতি এরই মধ্যে এক মাসের ছুটি নিলেন।