গলির মুখটা সরু-অন্ধকার। ভবনের সিঁড়ির অবস্থাও ভালো নয়। বাতি নেই, কোনাগুলো ভাঙা। নিচতলায় পানির কল তৈরির কারখানা। এ রকম একটি ভবনের দোতলায় চলে রাজধানীর দক্ষিণ কমলাপুর এলাকার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৩ এর কার্যক্রম।
গতকাল রোববার দুপুরে আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস প্রজেক্টের পার্টনারশিপ এলাকা-৪-এর এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ-শিশু চিকিৎসা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। চিকিৎসকের কক্ষে উম্মে আসমার তিন মাস বয়সী সন্তানকে দেখছেন চিকিৎসক। চিকিৎসক শিশুটির পেট-হাত-পা পরীক্ষা করছেন, আর মায়ের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জেনে নিচ্ছেন।
একই সময় দুই মাস বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন আরিফউদ্দিন শিকদার। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন। আবার কমলাপুরের শেষ মাথা থেকে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রুটিন চেকআপে নিয়ে এসেছেন মো. ইব্রাহীম।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের এ কেন্দ্রটিতে পাঁচ বছর ধরে আছেন চিকিৎসক নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন, ধীরে ধীরে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন পুরুষেরা স্ত্রীর প্রতি আগের তুলনায় অনেক বেশি যত্নবান এবং দায়িত্বশীল। স্ত্রীর অসুস্থতা বা গর্ভকালীন পাশে থাকেন। তবে সে সংখ্যা শতভাগ হতে এখনো অনেক বাকি।
এ কথার মিল পাওয়া যায় ২২ বছরের রোকসানা আক্তারের কথায়। স্বামী অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য দুধ-ডিমসহ পুষ্টিকর খাবার কিনে আনেন। কিন্তু রোকসানা খাবারের বিষয়ে সচেতন নন। এমনকি খুব দরকারি ক্যালসিয়াম এবং আয়রনের বড়ি ঠিকমতো না খাওয়ায় তিনি রক্তশূন্যতা এবং শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রটিতে সবাই প্রাথমিক সেবা নিতে আসে। তবে প্রসবপূর্ব এবং প্রসবপরবর্তী সেবা নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি রোগী আসে। কিশোরী ও শিশু রোগীর সংখ্যাও কম নয়। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাসিক নিয়মিতকরণের (এমআর) রোগীর আসার সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়ছে। এসব কিশোরীদের মায়েরাই মূলত নিয়ে আসে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, রোববার বেলা ৩টা পর্যন্ত মোট ৬৭ জন রোগী সেবা নিয়েছে। এর মধ্যে নারী ৩২ জন, পুরুষ ১৭ জন এবং শিশুর সংখ্যা ১৮। বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই কেন্দ্রে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সুযোগ পায়।
গতকাল ওই কেন্দ্রে চিকিৎসা নেওয়া কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা কেন্দ্রের সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও পরিবেশ নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টির কথা জানান।
কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসক, প্যারামেডিক ও কাউন্সেলরের জন্য পৃথক কক্ষ আছে। তবে ল্যাবরেটরি এবং ওষুধ বিক্রি চলে একই কক্ষে। এখানে বাজারমূল্যের চেয়ে ১০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ কেনার সুবিধা আছে। জানা গেছে, ক্যালসিয়াম ও আয়রন-জাতীয় ওষুধ বেশি বিক্রি হয়। গতকাল ৯২৭ টাকার ওষুধ বিক্রি হয়েছে।
এখানে সব ধরনের প্রাথমিক পরীক্ষা করার কথা থাকলেও মল পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।
অন্যান্য কেন্দ্রের মতো রোগীদের অপেক্ষার কক্ষে একটি অভিযোগ বাক্স ঝুলছে। সেখানে মূলত আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আরও প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য লোকজন লেখেন। পরিবেশ নিয়েও অসন্তুষ্টির কথা থাকে। নাম না প্রকাশের শর্তে এক রোগী বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হলে পুরো কেন্দ্রজুড়ে অন্ধকার নামে।
পার্টনারশিপ এলাকা-৪-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক জাকেরা হান্নান রুবাইয়্যাৎ বলেন, ভাড়াবাড়িতে থাকায় জায়গা সংকটসহ বেশ কিছু সমস্যা পোহাতে হয়। আর রোগীরা কিছু পরীক্ষা করাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না, তার মধ্যে একটি মল পরীক্ষা।