রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ধর্ষণ ও গণহত্যাসহ নানা ধরনের বর্বরতা সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকারের কাছে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ বিক্রি বন্ধ করতে অস্বীকার করেছে ইসরাইল। এ খবর দিয়েছে ইসরাইলের ইংরেজি দৈনিক হারেৎজ।
এ অবস্থায় একদল মানবাধিকার কর্মী ইসরাইলের কথিত হাইকোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করেছেন। এতে তারা মিয়ানমার সরকারের কাছে ইসরাইলি অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রি বন্ধ করার আদেশ দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন। পিটিশন দায়েরের পর ইসরাইলের একজন শীর্ষ পর্যায়ের
কর্মকর্তা বলেছেন, পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত ১০০ ট্যাংক, টহল নৌযান ও হালকা অস্ত্র বিক্রি করেছে। এছাড়া, ‘তার আইডিয়াল কনসেপ্টস’ নামে আরেকটি কোম্পানি মিয়ানমারের বিশেষ বাহিনীকে রাখাইন রাজ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
গত আগস্ট মাসে এ কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা ছবিতে দেখা গেছে, কোম্পানির লোকজন মিয়ানমারের সেনাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে- কীভাবে ইসরাইলি অস্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত স্থানে আনা হচ্ছে
বাসস
কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে আসার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
প্রশাসন ইতোমধ্যে মূল সড়কের পাশের পাহাড় থেকে বসতিগুলো তুলে দিয়েছে। তবে বড় সড়ক থেকে খানিকটা দূরের অধিকাংশ পাহাড়েই এখনো হাজার হাজার রোহিঙ্গা বিচ্ছিন্নভাবে রয়েছে।
কক্সবাজার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) মোহাম্মদ আলী কবীর আজ জানান, ‘পাহাড়ি এলাকায় তাবু করে অনেক রোহিঙ্গা এখনও বসবাস করছে। তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে সরকারের নির্ধারিত দুই হাজার একর জমিতে নিয়ে আসার কাজ চলছে। আশা করি সবাইকে ঠাঁই দেয়া সম্ভব হবে। বিচ্ছিন্নভাবে কাউকে বসবাস করতে দেয়া হবে না। সরকার নির্ধারিত জায়গায় না এলে ত্রাণসহ অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধ হয়ে যাবে।’
বনবিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে- উখিয়া ও টেকনাফের বালুখালী, তাজমিনার ঘোনা, নকরারবিল, কেরনতলী, পুটিবুনিয়া, বালুখালীরঢালা, কুতুপালং, সফিউল্লাহ ঘাটা এবং বাঘঘোনা-এই নয়টি পয়েন্টে এখনও রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য পাহাড়েও রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী আবাসস্থল রয়েছে।
২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধন শুরু হওয়ার পর থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। উখিয়ার কুতুপালং থেকে টেকনাফের মুছনী পর্যন্ত ছোট-বড় শতাধিক পাহাড়ে ঢল নামে রোহিঙ্গার।
প্রথমদিকে যে যার ইচ্ছামত পাহাড়ি বনভূমিতে অস্থায়ী বসতি গড়ে বাস করতে শুরু করে। কিন্তু অপরিকল্পতভাবে পাহাড় কেটে আশ্রয় শিবির নির্মাণ করার ফলে সামান্য বৃষ্টিপাত হলে পাহাড়ধসে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। অস্থায়ী আবাস গড়তে গিয়ে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী, টেকনাফের হ্নীলা, হোয়াইক্যং, লেদা, মুছনী, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির চাকডালা, তুমব্রু, জলপাইতলী এলাকায় পাহাড় ও বনভূমির বাঁশ-গাছ উজাড় করা হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রোহিঙ্গা বিষয়ে জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘যেসব রোহিঙ্গা বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে তাদের সবাইকে বালুখালীতে নির্ধারিত ক্যাম্পে যেতে হবে। কোনো রোহিঙ্গা পাহাড় দখল করে থাকতে পারবে না, ক্যাম্পের বাইরে কেউ থাকতে পারবে না।’
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা এখনও বিভিন্ন পাহাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যেকোনোভাবে তাদের সরকার নির্ধারিত বনভূমিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। নইলে পাহাড় ও গাছপালা যেভাবে কাটা হচ্ছে তাতে যেকোনো সময় ভয়াবহ ধস নামতে পারে। এতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।